ব্রিটেনে চার্লস যুগ শুরু : প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম  

ফানাম নিউজ
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪৪

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের সেন্ট জেমসেস প্যালেসে ঐতিহাসিক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জকে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস উপাধি পেয়েছেন তার বড় ছেলে উইলিয়াম ও পুত্রবধূ কেট মিডলটন। এছাড়া চার্লসের স্ত্রী, ডাচেস অব কর্নওয়েল ক্যামিলাকে এখন থেকে ‘কুইন কনসোর্ট’ বলে সম্বোধন করা হবে, তবে তার কোনো সার্বভৌম অধিকার থাকবে না। বিবিসি।

গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সেন্ট জেমসেস প্রাসাদে অ্যাকসেশন কাউন্সিল নামে একটি আনুষ্ঠানিক পরিষদের সামনে রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক হয়। এই অ্যাকসেশন কাউন্সিল ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য, দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদরা এবং ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপকে নিয়ে গঠিত। সেন্ট জেমসেস প্রসাদ ঘোষিত সার্বভৌম রাজার সরকারি বাসভবন।

তৃতীয় চার্লসকে রাজা ঘোষণার আগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ হাউস অব কমন্সের নেতা পেনি মর্ডান্ট রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু ঘোষণা করেন। এরপর শুরু হয় চার্লসকে রাজা ঘোষণার প্রক্রিয়া। ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠানের শুরুতে নতুন রাজা ছিলেন না। তবে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়ার্ধ্বে রাজাকে পরামর্শদানকারী জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকদের সমন্বয়ে গঠিত প্রিভি কাউন্সিলের বৈঠকে অংশ নেন তিনি। পরে প্রিভি কাউন্সিলের ক্লার্ক রিচার্ড টিলব্রুক চার্লসকে ‘রাজা, কমনওয়েলথের প্রধান, বিশ্বাসের রক্ষক’ ঘোষণা করেন। এর আগে সৃষ্টিকর্তা রাজাকে রক্ষা করুন বলে তিনি ঘোষণা দেন।

‘গার্টার কিং অব আর্মস’ প্রাসাদের ব্যালকনি থেকে নতুন রাজার ঘোষণা পাঠ করেন। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পেটে বাজানো হয় ‘গড সেভ দ্য কিং’। প্রাসাদের বাইরে সমবেত মানুষেরাও এ সময় গেয়ে ওঠে ‘গড সেভ দ্য কিং’। ট্রাম্পেটের তুর্যনিনাদের সঙ্গে লন্ডনের হাইড পার্ক ও টাওয়ার অব লন্ডন থেকে তোপধ্বনি করা হয়।

তৃতীয় চার্লসকে রাজা ঘোষণার পর ঘোষণায় স্বাক্ষর করা শুরু হয়। প্রিন্স উইলিয়াম ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং আর্চবিশপ জাস্টিন

ওয়েলবি তা প্রত্যক্ষ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা পার্কার, প্রিন্স উইলিয়াম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, থেরেসা মে, ডেভিড ক্যামেরন, গর্ডন ব্রাউন, টনি ব্লেয়ার এবং জন মেজরসহ প্রিভি কাউন্সিলের অন্তত ২০০ সদস্য। আর রাজা ঘোষণার অনুষ্ঠান ও অন্যান্য প্রক্রিয়া জনসাধারণকে দেখানোর জন্য রীতি ভেঙে এবারই প্রথম টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের নির্দেশও দিয়েছিলেন তৃতীয় চার্লস।
শপথ নেয়ার আগে রাজা তৃতীয় চার্লস এক ভাষণে তার প্রয়াত মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে স্মরণ করেন। রানির আদর্শ অনুসরণ করে যাওয়ার অঙ্গীকারও করেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী স্কটল্যান্ডের চার্চের নিরাপত্তা রক্ষা সম্পর্কিত একটি শপথে স্বাক্ষর করেন চার্লস।

প্রথমে মৃত রানির জন্য পতাকাগুলো অর্ধনমিত অবস্থায় থাকলেও নতুন রাজার সম্মানে সেগুলো পুরোপুরি উত্তোলন করা হয়। তৃতীয় চার্লসের রাজা হওয়ার ঘোষণা আজ রবিবার পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনসহ স্কটল্যান্ডের এডিনবরা, উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট, ওয়েলসের কার্ডিফ এবং অন্যান্য শহরে জনসমক্ষে প্রচার করা হবে, তারপর পতাকাগুলো ফের অর্ধনমিত হবে।

যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দিন সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকার পর বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকালে ৯৬ বছর বয়সে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ শান্তিপূর্ণভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। এর পর তাকে উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠে সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে স্বামী প্রিন্স ফিলিপ, বোন প্রিন্সেস মার্গারেট এবং বাবা ষষ্ঠ জর্জের পাশে সমাহিত করা হবে। সর্বসাধারণের সম্মান জানানোর জন্য সমাহিত করার ৪ দিন আগে থেকেই তার দেহ রাখা হবে ওয়েস্টমিনিস্টার হলে। জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্রিটিশ রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম

ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস গত শুক্রবার এক ভাষণে তার বড় ছেলে উইলিয়াম ও পুত্রবধূ কেট মিডলটনকে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস উপাধি দিয়েছেন। এই দুই উপাধি আগে চার্লস এবং তার প্রয়াত স্ত্রী ডায়ানার ছিল। চার্লসের সঙ্গে বিচ্ছেদের ৫ বছর পর, ১৯৯৭ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় ৩৬ বছর বয়সি ডায়ানার মৃত্যু হয়।

ভাষণে বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়ামকে প্রিন্স অব ওয়েলস ঘোষণা করে চার্লস বলেন, উইলিয়ামকে প্রিন্স অব ওয়েলস হিসেবে দায়িত্ব দিতে পেরে তিনি গর্ববোধ করছেন। রাজপদবি ত্যাগ করে বিদেশে বসবাস করছেন ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান। তাদের প্রতিও ভালেবাসা জানিয়েছেন চার্লস। পাশে থেকে সহযোগিতা করে যাওয়ার জন্য স্ত্রী ক্যামিলার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান চার্লস। নিজের জনসেবামূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিয়ের ১৭ বছর পর ক্যামিলা ‘কুইন কনসোর্ট’ হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নতুন রানি ক্যামিলা, থাকবে না সার্বভৌম ক্ষমতা

ফলে প্রায় সাত দশকেরও বেশি সময় পর ব্রিটেনের মানুষ এখন নতুন একজনকে রানি বলে ডাকবে। রাজা তৃতীয় চার্লসের স্ত্রী, ডাচেস অব কর্নওয়েল ক্যামিলাকে এখন থেকে ‘কুইন কনসোর্ট’ বলে সম্বোধন করা হবে। ক্যামিলা এবং চার্লসের বিয়ের আগেই নির্ধারিত হয় এই উপাধি। যদিও এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে ৭৫ বছর বয়সি ক্যামিলাকে এই উপাধিটি দেয়া হবে। কিন্তু তার কোনো সার্বভৌম অধিকার থাকবে না।