শিরোনাম
মাত্র তিন বছর বয়সে ইংল্যান্ডের যুবরাজ হয়েছিলেন তিনি। এরপর কেটে গেছে সাত দশক। সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ইংল্যান্ডের রাজসিংহাসনে আরোহনের জন্য অপেক্ষায় থাকায় পর ৭৩ বছর বয়সী রাজা তৃতীয় চার্লসের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর প্রথা অনুযায়ী ইংল্যান্ডের রাজা হয়েছেন তিনি।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জ্যেষ্ঠ পুত্র চার্লস কখনোই তার মায়ের মতো জনপ্রিয় ছিলেন না। এই বিষয়টি তাকে রাজা হিসেবে চাপে রাখতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে তিনিই বারবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বলে মনে করা হয়। প্রিন্সেস ডায়নার সঙ্গে বিবাহিত থাকা অবস্থায় অন্য সম্পর্কে জড়ানো থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ– ইংল্যান্ডের বাতাসে তাকে নিয়ে ভেসে বেড়ায় নানান গুঞ্জন।
ডায়নার সঙ্গে বিচ্ছেদ
রাজা তৃতীয় চার্লস নিয়ে কেলেঙ্কারির শুরুটা অনেক দশক আগে তার সাবেক স্ত্রী প্রিন্সেস ডায়নাকে নিয়ে। প্রিন্সেস ডায়না সবসময়ই ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। চার্লসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ডায়নার সঙ্গে তার সম্পর্ক শীতল, ক্যামেলিয়ার সঙ্গে গোপর প্রণয়–মোট কথা চার্লসের ব্যক্তিগত জীবনের নানা কেলেঙ্কারি নিয়ে ছিল জনমনে অসন্তোষ।
ব্ল্যাক স্পাইডার কেলেঙ্কারি
স্বাস্থ্যখাত থেকে পরিবে– বিভিন্ন বিতর্কিত জনসাধারণের ইস্যুতে ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতিবিদদের ওপর প্রয়োগ ও নাক গলানোর অভিযোগ উঠেছে চার্লসের বিরুদ্ধে।
তার স্ক্রল করা হাতের লেখার কারণে "ব্ল্যাক স্পাইডার" মেমো হিসাবে পরিচিত তার এবং সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে একটি এখন-কুখ্যাত সিরিজ চিঠিতে, চার্লস তাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন।
এ সংক্রান্ত চার্লসের হাতে লেখা কয়েকটি চিঠির কথা প্রকাশ্যে আসে যা ব্ল্যাক স্পাইডার’ নামে পরিচিত।
ওই চিঠিগুলো প্রকাশের তৎকালীন ভবিষ্যত রাজার বিরুদ্ধে একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ব্রিটেনের রাজা হিসেবে চার্লস নিজের ভূমিকা পালন করতে পারবেন কী না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
কারণ প্রথা অনুযায়ী ইংল্যান্ডের রাজা ভোট দিতে পারবেন না। পারবেন না নির্বাচনে দাঁড়াতেও। রাজপ্রধান হিসেবে তাকে কঠোরভাবে রাজনীতির ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।
তবে সংসদীয় অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন, সংসদ থেকে আইন অনুমোদন এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠকে উপস্থিত থাকতে হবে ইংল্যান্ডের রাজাকে।
অবশ্য নিজের ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে ২০১৮ সালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চার্লস জোর দিয়ে বলেছিলেন, তিনি কখনই সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেননি।
অনুদানের জন্য নগদ অর্থ গ্রহণ
চলতি বছর রাজা তৃতীয় চার্লসের বিরুদ্ধে কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এক মিলিয়ন ইউরো ভর্তি একটি স্যুটকেট নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে।
ওই স্যুটকেসে কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হামাদ বিন জসিমের মোট তিন মিলিয়ন ইউরোর তিনটি নগদ অনুদানের মধ্যে একটি ছিল বলে সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়।
অবশ্য লন্ডনে চার্লসের রাজকীয় বাসভবন ক্লারেন্স হাউস জানিয়েছিল, শেখের কাছ থেকে অনুদান অবিলম্বে প্রিন্স চার্লসের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের একটিতে পাঠানো হয়েছিল। এই লেনদেন সব সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। লেনদেনটি অবৈধ ছিল এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রিন্স চার্লস ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে তিনটি নগদ অনুদান পেয়েছিলেন।
হিসাবরক্ষকরা বলছেন, সৎ উদ্দেশ্যে নগদ অর্থ নেওয়া বৈধ অনুদান হিসাবেই মনে করা হয়। কিন্তু বর্তমান রাজকীয় উপঢৌকন নীতি অনুযায়ী, রাজপরিবারের সদস্যরা কখনওই ‘নগদ অর্র্থ’ নিতে পারেন না, বরং দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ‘চেক’ নিতে পারেন।
অথচ প্রিন্স চার্লস একজন বিদেশি ধনকুবেরের কাছ থেকে স্যুটকেস ভরে নগদ ইউরো নিয়েছিলেন, যে কারণেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
সূত্র: এএফপি