শিরোনাম
চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরবে একটি ভয়ংকর মাদক-প্ররোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশটির গণমাধ্যমকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে এক ব্যক্তি ইফতারের আগে তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় তার পরিবারের চার সদস্য নিহত হয়।
পুলিশ জানায়, স্থানীয় নথিপত্র অনুযায়ী ওই ব্যক্তির দেহে শাবু বা মেথামফেটামিন নামে এক ধরনের মাদকের প্রভাবে ছিল।
সম্প্রতি সৌদি গণমাধ্যম দেশটিতে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। সৌদিতে মাদকের চালান প্রসঙ্গে একজন কলামিস্ট বলেছেন, এটি আমাদের বিরুদ্ধে খোলা যুদ্ধ, যা অন্য যেকোনো যুদ্ধের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক।
বুধবার রাজধানী রিয়াদের একটি গুদামে ময়দার মধ্যে লুকানো প্রায় চার কোটি ৭০ লাখ অ্যামফিটামিন বড়ির চালান আটক করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। যা দেশটির ইতিহাসে অবৈধ ওষুধের বৃহত্তম চালান জব্দের ঘটনা বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেকর্ড পরিমাণ মাদক জব্দের ঘটনা প্রমাণ করে মধ্যপ্রাচ্যের মাদকের রাজধানী হয়ে উঠছে সৌদি আরব। মাদকের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সিরিয়া ও লেবাননের চোরাকারবারীদের প্রাথমিক গন্তব্য হয়ে উঠছে দেশটি।
তারা বলেন, সৌদি মাদকের জন্য সবচেয়ে বড় ও লাভজনক আঞ্চলিক গন্তব্যগুলোর মধ্যে একটি, দিনে দিনে অবস্থা আরও তীব্র হচ্ছে।
সৌদির জেনারেল ডিরেক্টরেট অব নারকোটিকস কনট্রোলের তথ্যমতে, বুধবারের অভিযানে সবচেয়ে বড় একক মাদক চোরাচালান আটক হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জব্দকৃত মাদকের নাম বা কোথা থেকে এসেছে তা জানায়নি।
এর আগে জাতিসংঘের মাদকদ্রব্য ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয়-ইউএনওডিসি জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অ্যামফিটামিন জব্দ হওয়ার প্রতিবেদনগুলোতে প্রধানত ক্যাপ্টাগন লোগোযুক্ত ট্যাবলেট পাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে৷
ক্যাপ্টাগন মূলত উত্তেজক ফেনিথিলাইন সমৃদ্ধ ওষুধি পণ্যের ব্র্যান্ড। যদিও এটি আর বৈধভাবে উৎপাদন করা হয় না। তবে ক্যাপ্টাগন নামের নকল ওষুধগুলো নিয়মিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে জব্দ করা হয়ে থাকে বলে জানায় ইউরোপীয় মনিটরিং সেন্টার ফর ড্রাগস অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডিকশন।
সৌদি আরব ও আশপাশের অঞ্চলে ক্যাপ্টাগন মাদকের জব্দের ঘটনা সময়ের সঙ্গে বেড়েছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে ওমান উপসাগরে মাছ ধরার একটি নৌকা থেকে ৩২০ কিলোগ্রাম অ্যামফিটামিন ট্যাবলেট এবং প্রায় তিন হাজার কিলোগ্রাম গাঁজা আটক করেছে মার্কিন কোস্টগার্ড। যার বাজারমূল্য আনুমানিক কয়েক মিলিয়ন ডলার।
ওয়াশিংটন ডিসির ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ফেলো ভান্ডা ফেলবাব-ব্রাউন বলেন, মাদকটি প্রায় ১৫ বছর আগে সৌদিতে জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এটি আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। এটি অনেকটা গাঁজার মতোই ব্যবহার করা হচ্ছে।
ক্যাপ্টাগন ব্যবহারে ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সৌদিতে বানের পানির মতো মাদকটি আসছে, বেশির ভাগই সিরিয়া থেকে। কারণ, সেখানে আসাদ শাসনের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রাসায়নিক কারখানাগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করা হচ্ছে এবং আসাদের অনুসারীরাই এর সরবরাহ করছে।
সৌদি আরবের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে সিএনএন-এর অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
সূত্র : সিএনএন