ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ’হলোকাস্ট’-এর অভিযোগ আব্বাসের, ক্ষুব্ধ জার্মানি

ফানাম নিউজ
  ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৭:০২

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মঙ্গলবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের উপর ‘হলোকাস্ট’ চালানোর অভিযোগ করেছেন। বার্লিনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন।

১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিক প্রতিযোগিতার সময় ইসরায়েলি খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের উপর ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হামলায় ১০ জনের হত্যার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এক সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট আব্বাসকে প্রশ্ন করেন, তিনি এই ঘটনার জন্য ইসরায়েলের কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা। জবাবে আব্বাস বলেন, ইসরায়েল ১৯৪৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনের ৫০টি জায়গায় ৫০টি গণহত্যা চালিয়েছে। সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘৫০টি গণহত্যা, ৫০টি হলোকাস্ট’।

জার্মানির বার্লিন শহরে দাঁড়িয়ে তিনি এমন শব্দ বেছে নেওয়া বিষয়টিকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। ‘হলোকাস্ট’ শব্দটি শুনে জার্মান চ্যান্সেলরের মুখচ্ছবি চরম অস্বস্তি, ক্রোধ ও আতঙ্কে ভরে যায়। তবে সেই মুহূর্তে তিনি কোনো মন্তব্য করেন নি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আব্বাসের জবাবের পরেই চ্যান্সেলরের মুখপাত্র স্টেফেন হেবেস্ট্রাইট সংবাদ সম্মেলন আচমকা শেষ করে দেন।

হেবেস্ট্রাইট পরে বলেন, শলৎস আব্বাসের বক্তব্য শুনে অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছেন। চ্যান্সেলরের মুখপাত্র সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দেন, বিশেষ করে জার্মানদের কাছে হলোকাস্ট শব্দটি আপেক্ষিক অর্থে ব্যবহারের প্রচেষ্টা অসহনীয় এবং একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

একই সংবাদ সম্মেলনে শলৎস আব্বাসের মুখে ‘অ্যাপারথাইড’ শব্দটির বিরোধিতা করেন। মঙ্গলবারের ঘটনার পর জার্মান চ্যান্সেলর ‘বিল্ড’ সংবাদপত্রকে বলেন, হলোকাস্টের ভয়াবহতা ছোট করে দেখানো একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ বলেন, ‘জার্মানির মাটিতে দাঁড়িয়ে মাহমুদ আব্বাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেভাবে ‘৫০টি হলোকাস্ট’-এর অভিযোগ করলেন, তা শুধু নৈতিক অবমাননা নয়, সেইসঙ্গে বিশাল মিথ্যাচারও বটে। লাপিদ মনে করিয়ে দেন যে, হলোকাস্টে ৬০ লাখ ইহুদি নিহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ১৫ লাখ শিশুও ছিল৷ ইতিহাস কখনোই তাকে ক্ষমা করবে না’।

জার্মানিতে আব্বাসের বক্তব্য ও চ্যান্সেলরের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শলৎস যেভাবে সেই মুহূর্তে নীরব থেকেছেন, তার সমালোচনা করেছেন বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস। তার মতে, অবিলম্বে চ্যান্সেলরের স্পষ্ট ভাষায় এমন মন্তব্যের বিরোধিতা করা এবং আব্বাসকে চলে যেতে বলা উচিত ছিল।

সিডিইউ দলের আরেক নেতা আরমিন লাশেট বলেন, এর আগে জার্মান চ্যান্সেলরের দপ্তরে এত জঘন্য বক্তব্য রাখা হয় নি। উল্লেখ্য, আব্বাস এর আগেও হলোকাস্ট শব্দটিকে আপেক্ষিক অর্থে ব্যবহার করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘নাৎসি জার্মানির হাতে ৬০ লাখ ইহুদির গণহত্যার আসল কারণ মোটেই ইহুদি বিদ্বেষ ছিল না, বরং সুদখোর মহাজন হিসেবে সমাজে তাদের অবস্থানই এর মূল কারণ’।