শিরোনাম
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন আজ ১৬৭তম দিনে গড়িয়েছে। রাশিয়া ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্কের পুরোটা এবং দোনেৎস্ক প্রদেশের অর্ধেক দখল করে নিয়েছে। ইউক্রেনে হামলার আগে রাশিয়া এই দুটি অঞ্চলকে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছিল।
এছাড়া ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন এবং ঝাপোরিজ্ঝিয়ার সহ আরও কয়েকটি শহর দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনও সেসব উদ্ধার না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
খেরসনকে রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করলো ইউক্রেন
রাশিয়ার সঙ্গে খেরসনের মূল যোগাযোগের রাস্তা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে দাবি করেছে ইউক্রেন। দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চল যুদ্ধের একেবারে গোড়াতেই দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া। এই অঞ্চলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ থাকেন। ইউক্রেন এই অঞ্চলটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং নিজেদের অঞ্চল বলে মনে করে। দীর্ঘ যুদ্ধের পর সেই খেরসনে কৌশলগত সুবিধা পাওয়ার রাস্তা তৈরি করল ইউক্রেন। অন্তত, ইউক্রেনের সেনার দাবি তেমনই।
ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে খেরসন প্রবেশের অন্যতম রাস্তা নিপ্রো নদী। ওই নদীর উপর গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু ছিল। এতদিন সেই সেতুর ব্যবহার করেই খেরসনে সেনা এবং রসদ পাঠিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেন কয়েকদিন আগে দাবি করেছিল, সেতুর সেই রাস্তা তারা বন্ধ করে দিতে পেরেছে। সেতুটি নষ্ট করে দেওয়া গেছে। সোমবার তারা জানিয়েছে, রাতভর ওই সেতুতে শেলিং করে সেটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওই সেতু পার করে রাশিয়া খেরসনে নতুন করে সেনা বা রসদ পাঠাতে পারবে না। খেরসনে অবস্থিত রাশিয়ার সেনাও বাইরে যেতে পারবে না। তারা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধারাও একথা স্বীকার করেছে। তবে তারা জানিয়েছে, ইউক্রেনের আক্রমণে সেতুটি বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে, একথা তারা স্বীকার করেনি। বরং তাদের বক্তব্য, রাশিয়া ইতিমধ্যেই সেতুটি সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। নৌকার মাধ্যমেও তারা জিনিসপত্র আদানপ্রদান করতে পারবে বলে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা জানিয়েছেন। যদিও ইউক্রেন সেই কথায় আমল দেয়নি। তাদের বক্তব্য, এবার খেরসনে পুনর্দখলের কাজ শুরু হবে।
ঝাপোরিজ্ঝিয়ার পরিস্থিতি
ঝাপোরিজ্ঝিয়ার পরমাণু প্রকল্পে যেতে চায় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস আবেদন করেছেন, তাদের প্রতিনিধিদের যেন ওই রমাণু কেন্দ্রে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। ওই কেন্দ্রটি নিয়ে চিন্তায় জাতিসংঘ-সহ একাধিক সংস্থা। কারণ সম্প্রতি ওই কেন্দ্রে মিসাইল হামলা হয়েছে। যার দায় রাশিয়া এবং ইউক্রেন একে অপরের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।
ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু প্রকল্পটি এখন রাশিয়ার দখলে। কিন্তু তার ভিতর ইউক্রেনের কর্মীরা এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ওই কেন্দ্রের ভিতরে মিসাইল ছোঁড়া হয়। ঘটনায় পরমাণু কেন্দ্রের বিশেষ ক্ষতি হয়নি বলে রাশিয়া দাবি করেছে। তবে একটি রিঅ্যাক্টর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক কর্মীর মৃত্যুও হয়েছে।
গুতেরেস জানিয়েছেন, তারা ওই পরমাণু কেন্দ্র ঘুরে দেখতে চান। পরমাণু কেন্দ্রে আক্রমণ একরকম আত্মহত্যার পরিকল্পনা বলে জানিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রটি যাতে সুরক্ষিত থাকে, তার দায়িত্ব নিতে হবে বলে আবেদন করেছেন গুতেরেস।
ইজিয়ামে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্তোভিচ ইউটিউবে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে বলেছেন, উত্তর-পূর্বের খারকিভ শহরের আশেপাশেও ইউক্রেনীয় সেনারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ান বাহিনীর কাছ থেকে দোভেনকে শহরটি দখল করে ইজিয়ামের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে তারা।
এছাড়া খারকিভের উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বের শহরগুলোতে ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি এবং রকেট থেকে হামলা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী।
আরেস্তোভিচ বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই অনুকুলে রয়েছে। ইউক্রেনের বাহিনী অত্যন্ত সফলভাবে অগ্রসর হচ্ছে। রাশিয়ার হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। ইউক্রেনের সেনারা তাদের ঘিরে ফেলতে পারে’।
ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র
ইউক্রেনকে আরো এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আমেরিকা। সোমবার হোয়াইট হাউস থেকে একথা জানানো হয়। বস্তুত, ইউক্রেন জানিয়েছে, মার্কিন দূরপাল্লার মিসাইল ব্যবহার করেই তারা খেরসনে কৌশলী সুবিধা পেয়েছে। তাদের আরো মিসাইল প্রয়োজন বলেও জানিয়েছে ইউক্রেন। আমেরিকাও জানিয়েছে, তাদের আরো অস্ত্র দেওয়া হবে। এক সপ্তাহ আগেই আমেরিকা ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এবার ঘোষণা হলো এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রের প্যাকেজ। অন্যদিকে, জার্মানির অস্ত্রও ইউক্রেনে গিয়ে পৌঁছেছে।