শিরোনাম
‘গরিবের মহাদেশ’ আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশ কেনিয়ায় আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীবেষ্টিত দেশটির আঞ্চলিক ভাষায় কেনিয়া অর্থ ‘প্রভুর বিশ্রামের স্থান’। বড় মালভূমি ও উঁচু পর্বতে ঘেরা ভূখণ্ডটির রাজনীতিও পুরোপুরি গোষ্ঠীনির্ভর।
দেশটির প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা যতটা ভোটের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, তার চেয়েও বেশি গোষ্ঠী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ গোষ্ঠীপ্রধানদের কথা মতোই ভোট দেন ভোটাররা। এ ক্ষেত্রে দেশটিতে আধিপত্য বিস্তারকারী গোষ্ঠী হলো কিকুয়ু। কেনিয়ার সবচেয়ে বড় এই আদিবাসী গোষ্ঠীটির বাস ‘মাউন্ট কেনিয়ায়’। আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত। স্বাধীনতার (১৯৬৩) পর থেকে চারজন প্রেসিডেন্টের তিনজনই এই পর্বতের বাসিন্দা।
কিন্তু এবারের চিত্র কিছুটা হলেও ভিন্ন। প্রজাতন্ত্র ভোট-সরকার কোনো কিছুতেই আর অস্থা নেই নাগরিকদের। বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, লাগাম ছাড়া দুর্নীতি দেশটির জনসাধারণকে ভোটবিমুখ করে ফেলেছে। সে কারণেই ভোটারদের মন জয়ে নেতাদের এবার অন্যবারের তুলনায় একটু বেশিই কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। বেড়েছে মাত্রা ছাড়া বেহায়াপনাও!
দেশটির দুই কোটি ২০ লাখ ভোটারের মধ্যে একটা বড় অংশই তরুণ প্রজন্মের। লাগাম ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তারা ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবুও যুবসমাজসহ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নিজেদের বিলাসবহুল জীবনযাপন ছেড়ে এক লাফে ‘নুন আনতে পান্তা’ খাওয়াদের কাতারে নেমে এসেছেন দুর্নীতির পচা-গলা গলির শিরোমনি কেনিয়ার দুর্ভাগ্যের প্রাণপুরুষরা। ভরা বাজারে সবজি কাটছেন কেউ, কেউ আবার হাসিমুখে পরিষ্কার করছেন গণ-টয়লেট। ফুটপাতে ধারে বসে জুতাও পলিশ করছেন কেউ কেউ। দিন শেষে নিজেদের ‘লোক হাসানো’ এসব কর্মকাণ্ড আবার শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভোটের আগের নেতাদের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে রীতিমতো হাসি-ঠাট্টা-বিদ্রূপের রোল পড়েছে দেশটির তরুণ সমাজে।
সবচেয়ে বেশি বিনোদন দিয়েছে এমন রাজনীতিবিদদের মধ্যে একজন জুবিলি পার্টির পলিকার্প ইগাথে। রাজধানী নাইরোবিতে মোপ (মেঝে পরিষ্কারের ঝাড়ু) এবং বালতি নিয়ে বুট-গ্লাভস পরে পাবলিক টয়লেট পরিষ্কার করেছেন। ইগাথে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এটিকে নোংরা কাজ হিসাবে বিবেচনা করা হলেও এটি একটি দায়িত্বশীল কাজ।’ এ সময় তিনি শহরের টয়লেট ক্লিনারদের নতুন মোপ এবং বালতি বিতরণ করেন।
ইগাথের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নাইরোবির সিনেটর জনসন সাকাজা। তিনিও ভোটারদের আস্থা অর্জনে এমন ছলচাতুরি করতে লজ্জা পাননি। ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের এ প্রার্থী রাস্তার পাশের বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাছ কেনা এবং সুপারমার্কেটের পরিবর্তে বাজার থেকে টমেটো এবং পেঁয়াজ কেনার ছবি শেয়ার করেছেন।
সাকাজা ২০১৭ সাল থেকে নাইরোবির সিনেটর ছিলেন এবং প্রথমবারের মতো গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিত্বহীন এমন বেহায়াপনা দেখে নাইরোবির বাসিন্দা অ্যান ওয়াম্বুই বলেন, ‘ভোটের প্রচারণা শুরু না হওয়া পর্যন্ত রাজনীতিবিদরা জানেনও না বাজারগুলো কোথায় অবস্থিত।
যারা সবসময় দামি জায়গায় কেনাকাটা করে তারা ভোটের আগে আসে আমাদের কষ্ট বোঝার ভান করতে অথচ আমরা এই শহরে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছি।’ ডিডমুস উইকেসা বারাসা কেনিয়ার আরেক নেতা এবং প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা। তিনি ২০১৭ সাল থেকে কিমিলিলি আসনের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদ-সদস্য। ডিডমুস বারাসা তার বিলাসবহুল গাড়ি ছেড়ে মোটরবাইক ট্যাক্সিতে চড়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। যেহেতু ঠেলাগাড়ি তার নির্বাচনি প্রতীক তাই একটি ঠেলাগাড়িতে চড়ে আরোহণ করেন। আরেকটি ফটোতে দেখা যাচ্ছে চকচকে জুতা পরে ৬৭ বছর বয়সি বিধবার জন্য চা তৈরি করার চেষ্টা করছেন বারাসা।
সামাজিক মাধ্যমে এসব ছবি দিয়েও সবার মন জয় করতে পারেননি। অনেকেই বিরুপ মন্তব্যও করেছেন। আরেক সিনেটর আইজ্যাক মাওয়ারা নাইরোবিতে খোলাবাজারে বিক্রেতাদের শাকসবজি কাটতে সাহায্য করে এমপি হিসাবে তার দল জুবিলি পার্টির টিকিট পাওয়ার জন্য অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন।
মাওয়ারা বলেন, তিনি রাজধানীর রুইরু নির্বাচনি এলাকায় ছোট ব্যবসায়ীদের সংগ্রাম বোঝার চেষ্টা করছেন। সামাজিক মাধ্যমে মাওয়ারার এ ছবি দেখে এক ব্যক্তি কমেন্ট করেছেন, দুঃখের বিষয় হলো আপনি এর আগে সবজি বিক্রেতাদের অস্তিত্বই জানতেন না। এখন ভোটের আগে এসেছেন এই সহানুভূতি দেখাতে।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে লড়ছেন চার প্রার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন আজমিও লা উমোজা জোটের নেতা রাইলা ওডিঙ্গা, কেনিয়া কোয়ানজা জোটের নেতা উইলিয়াম রুটো, আগানো পার্টির নেতা ডেভিড মোয়াউর ওয়াইহিগা অপরজন রুটস পার্টির জর্জ ওয়াযেকোয়াহ।
চারজনের মধ্যে এগিয়ে আছে রাইলা। কেননা বর্তমান প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তার সমর্থন রয়েছে তার ওপর।