শিরোনাম
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও জনসমর্থন কমেনি ইমরান খানের। পাঞ্জাবে উপনির্বাচনে পিটিআইয়ের বিশাল জয় তার প্রমাণ। তবে জয়ের রেশ না ফুরাতেই পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তাতে ইমরান রাজনীতি করতে পারবেন কি না এ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
পাঞ্জাব উপনির্বাচন
পাকিস্তানের ক্যারিশমাটিক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রায় চার মাস আগে গদি ছাড়তে বাধ্য হন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি কিন্তু পারেননি। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে হেরে তাকে বিদায় নিতে হয়। এরপর ইমরানের প্রতিপক্ষরা জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে একটি জোট সরকার গঠন করে। পার্লামেন্টে অপমানজনক পরাজয়ের পর ৬৯ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান অবশ্য চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। চলতি বছরের এপ্রিলে তাকে গদিচ্যুত করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত থাকার অভিযোগ আনেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পদে ফিরে আসার প্রত্যয় জানিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে সমাবেশ করতে থাকেন ইমরান। সেসব সমাবেশে জনগণের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বিপুলসংখ্যক তরুণদের ইমরানের সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। পাকিস্তানে আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। এদিকে ইমরান খানের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বারবার বলে আসছে, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে, আগাম নির্বাচনের সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের রাজনীতির মাঠ গত মাসে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ক্ষমতা হারানোর পর কয়েক মাস না যেতেই ইমরান খান ফের আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। ১৭ জুলাই পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবে উপনির্বাচনে ২০টি আসনের মধ্যে ১৫টিই জেতে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। পাঞ্জাব দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই পাঞ্জাব প্রদেশ। ইমরানের দলের অপ্রত্যাশিত ভূমিধস বিজয় নিঃসন্দেহে শাহবাজের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে চাপে ফেলে। এমনিতেই শাহবাজ শক্তিশালী জোট গড়তে পারেননি, ৯টি রাজনৈতিক দল নিয়ে এপ্রিল মাসে দুর্বল সরকার গঠন করেন তিনি। তার ওপর দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা ও একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্ষমতায় বসার পর শাহবাজ সরকারকে নিশ্চিন্ত থাকতে দেয়নি। পাকিস্তানের ইতিহাসে সাম্প্রতিক রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল দেশটির লাখ লাখ মানুষ। জ্বালানির দাম চড়া। ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির মান ধারাবাহিকভাবে নিম্নমুখী। দেশটিতে গত মাসের শেষে ২৩৭ রুপিতে বিক্রি হয় এক ডলার। খরা ও অতিবৃষ্টি দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তোলে। পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ বিশেষজ্ঞ মহল। দেশটির রাজনীতিক ও কলামিস্ট আয়াজ আমির বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। তার ওপর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এটিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। রাজনীতিকদের দৃষ্টি শুধু ক্ষমতার দিকে আবদ্ধ, দেশের মূল সমস্যা তাদের মনোযোগ সেভাবে আকর্ষণ করছে না। বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, এ নিয়ে তাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। জনগণের ম্যান্ডেট অগ্রাহ্য না করে রাজনীতিকদের কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দেওয়া জরুরি। নয়তো ভবিষ্যতে আরও বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই দেখবে না দেশের মানুষ।’
সমর্থন অটুট
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইমরানের এ মুহূর্তে ক্ষমতায় না থাকা তার জন্য মঙ্গল বয়ে এনেছে। পাকিস্তানের চলমান অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য ইমরান অবশ্যই দায়ী। তবে তাকে একা দায়ী করা ঠিক নয়। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও মুক্তবাজার অর্থনীতি আজ পাকিস্তানকে এ জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ দিয়ে পাকিস্তানের বিদ্যমান সংকট দূর করতে তো পারছেই না উল্টো তাদের পরামর্শ মেনে কাজ করতে গিয়ে শাহবাজ সরকারকে বিদ্যুৎ, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, যা গণবিরোধী ও তাতে নতুন জোট সরকারের ওপর জনরোষ বাড়ছে বৈ কমছে না। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতার বাইরে থেকে সরকারের সমালোচনা ইমরানকে আখেরে লাভবানই করছে। খরা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিনির্ভর দরিদ্র অঞ্চলে গিয়ে তিনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামবাসীদের ওয়াদা করছেন, ফের ক্ষমতায় গেলে তাদের কল্যাণে কাজ করবেন। গত মাসের শেষ সপ্তাহে পাঞ্জাবের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যাকবলিত অঞ্চলে যান ইমরান। এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাবেক ক্রিকেটারকে একনজর দেখতে খালি পায়ে রাস্তার দুপাশে ভিড় করে গ্রামের শত শত মানুষ। গুলাম সারওয়ার নামে ইমরানের দল পিটিআইয়ের এক আইনপ্রণেতা বলেন, ‘ভারী বর্ষণে মানুষজন আসতে পারবে কি না এ নিয়ে উদ্বেগে ছিলাম, কিন্তু দেখলাম ইমরানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাতা-জুতো ছাড়াই বৃষ্টি-কাদা উপেক্ষা করে নেতাকে দেখতে মাইলের পর মাইল তারা হেঁটে এসেছে। এ বছর প্রচুর গম ও তুলা উৎপাদনের কথা থাকলেও একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব নষ্ট করে দিয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ ইমরানকে ভালোবাসে। আগামী নির্বাচনে তারা তাকে আবারও ভোট দেবে বলে আমরা মনে করি।’ শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শহুরে নাগরিকদের সমর্থন আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন ইমরান। আগাম নির্বাচনের দাবিতে তিনি বড় বড় শহরে সমাবেশ করছেন, ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিচ্ছেন। পাঞ্জাবে উপনির্বাচনের আগে সমর্থকদের উদ্দেশে ইমরান সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘ভোট কেনার পরিকল্পনা হচ্ছে। এই অপতৎপরতা ঠেকাতে হবে। ক্ষমতায় আমদানি করা সরকার বসাতে যুক্তরাষ্ট্র ষড়যন্ত্র জারি রেখেছে।’ ইমরানের বক্তব্য আশাবাদী করে তার সমর্থকদের। ইমরানের সমাবেশে অংশ নেন ৩০ বছর বয়সী গাড়িচালক রাজা ওয়ালি। স্ত্রী ও দুই সন্তানকেও সমাবেশে আনেন তিনি। রাজা বলেন, ‘দেশে ইমরানই একমাত্র সৎ নেতা, যিনি আমাদের কথা ভাবেন। দেশের অন্য রাজনীতিকরা সব চোর। আমরা সবাই এখন গর্তে পড়েছি। ইমরান আমাদের সেই গর্ত থেকে তুলতে চাইছেন। আমরা চাই না, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার মতো হোক। আমরা দেশে দ্রুত নির্বাচন চাই। আমরা ইমরানকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চাই।’
জয়ের কারণ
পাঞ্জাবে ইমরানের জয় দেখে লন্ডনের কিং’স কলেজের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র ফেলো আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘১৭ জুলাইয়ের উপনির্বাচনের ফল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, রাজনীতিতে ইমরান খানের ব্যাটিং এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তার দল পাঞ্জাবে ২০টি আসনের মধ্যে ১৫টি জিতেছে। এত দিন ধরে সবাই জেনে আসছে, প্রদেশটি ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) ঘাঁটি কিন্তু ইমরানের দল পিটিআই গত মাসে দেখিয়ে দিল প্রতিপক্ষের শক্ত ঘাঁটিতে লড়াই করেও জেতা যায়। ক্ষমতায় থাকার শেষ সময়ে অজনপ্রিয় হয়ে পড়া ও একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখে সাবেক ক্রিকেটারকে অনেকে রাজনীতির খাতা থেকে বাদই দিয়েছিল। অনেক সাংবাদিক মনে করেছিলেন, পাকিস্তানের ক্ষমতা ভুট্টো ও শরিফ পরিবারের হাতে ফিরেছে। পাঞ্জাবের উপনির্বাচনের ফল দেখে তারা হয়তো এখন এমনটা নাও ভাবতে পারেন। আবার রাজনীতিতে ইমরানের সাম্প্রতিক জয় দেখে তার পক্ষে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না। তবে প্রতিপক্ষের ঘাঁটিতে তিনি বা তার দল কীভাবে জয় পেল, তা বিশ্লেষণের দাবিদার। প্রথমত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ মেনে করবৃদ্ধি, ভর্তুকি প্রত্যাহারসহ বেশ কটি সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকারের জনপ্রিয়তায় আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। যুদ্ধের আগে থেকেই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল ছিল। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার মতো যাতে দেউলিয়া হতে না হয়, এজন্য এ মুহূর্তে আইএমএফের শর্ত মানা ছাড়া উপায় নেই প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের, কারণ শর্ত মানলেই শুধু সংস্থাটির কাছ থেকে পাকিস্তান সরকার ঋণ সুবিধা পাবে, অন্যথায় নয়। জীবনযাপনের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন শাহবাজ সরকারকেই দায়ী করছে। দ্বিতীয়ত, জোট সরকার জনগণকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে, ইমরান সরকারের ভুলনীতির কারণে দেশ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিকল্পনীতি হাজির করতে পারছে না জোটের নেতারা। এপ্রিলে ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) তরুণ বা নারী ভোটারদের দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজের মাধ্যমে কার্যকরভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ক্ষমতায় আসতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আঁতাত করে ইমরানের দল পিটিআইয়ের এমন বক্তব্য দেশের তরুণ ও নিরপেক্ষদের মনে ধরে। তৃতীয়ত এবং অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইমরানের প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অকুণ্ঠ সমর্থন। সেনাপ্রধান বাজওয়ার সঙ্গে সাবেক ক্রিকেটারের সম্পর্কে ফাটল ধরলেও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের অনেকে এখনো ইমরানকে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সাবেক প্রধান জেনারেল জহির-উল-ইসলাম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল তারিক খানসহ অনেকে। পাঞ্জাবের উপনির্বাচনের ফল সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন দল ও লবির মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।’
বিধি বাম
পাঞ্জাবের উপনির্বাচনে জয়ের ঢেকুর অবশ্য বেশি দিন তুলতে পারেননি ইমরান খান। গত সপ্তাহে তার সম্পর্কে বোমা ফাটানো তথ্য জানতে পারে পাকিস্তানিরা। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনে (ইসিপি) বেশ কয়েক বছর আগে পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে তহবিল গ্রহণের অভিযোগ করা হয়। দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগটি করেছিলেন ইমরান খানেরই একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র আকবর এস বাবর। গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ওই অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানায়। এতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান তার দল পিটিআইয়ের জন্য ৩৪ জন বিদেশি ব্যক্তি বা কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন। এই অর্থের পরিমাণ ২১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ ডলার। বিদেশিদের কাছ থেকে রাজনৈতিক দলের অর্থ নেওয়া পাকিস্তানে অবৈধ। নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-সংক্রান্ত জাল অ্যাফিডেভিট নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় পিটিআই। এ ছাড়া দলটি তাদের ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য গোপন করে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি কোম্পানি এসএস মার্কেটিং ম্যানচেস্টার, সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক কোম্পানি ব্রিস্টল ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস অ্যান্ড ই-প্ল্যানেট ট্রাস্টিজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান গ্রহণ করে পিটিআই। সিদ্ধান্ত জানানোর পর বিদেশিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তহবিল কেন বাজেয়াপ্ত করা হবে না, পিটিআইয়ের কাছে তার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। দুবাইভিত্তিক কোম্পানি আবরাজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ধনকুবের আরিফ নাকবির আরেক প্রতিষ্ঠান উটন ক্রিকেট ক্লাব থেকে পিটিআই অর্থ গ্রহণ করে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসে ছাপা হয়। এরপরই পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ওই সিদ্ধান্ত জানায়।
এ বিষয়ে পিটিআইয়ের মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করব। প্রবাসী পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অর্থ বা তহবিল গ্রহণ করা হয়। আমি বুঝতে পারছি না, কেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতারা দেশের বাইরে অবস্থান করা পাকিস্তানিদের শত্রু হিসেবে দেখছেন। আমরা মনে করি, প্রবাসী পাকিস্তানিরা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড।’ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট অভিযোগকারী আকবর এস বাবর বলেন, ‘ইমরান খানের বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তার পিটিআই থেকে বিদায় নেওয়া উচিত।’ এদিকে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত জানানোর পরদিন পিটিআই নেতা ইমরানকে অযোগ্য ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও প্রতিপক্ষ ইমরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পিটিআই যদি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তার পরও উদ্ভূত পরিস্থিতি ইমরান খানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য বিশাল বড় আঘাত, বিশেষ করে যেখানে নির্বাচন বেশি দূরে নয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও জনসমর্থন ধরে রেখেছিলেন ইমরান, যার প্রতিফলন ঘটে পাঞ্জাবের উপনির্বাচনে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পর পিটিআই নিষিদ্ধ হতে পারে। শুধু তাই নয়, ইমরান আর রাজনীতি করতে পারবেন কি না তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনের আগে কমিশনের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ভোগাবে সাবেক ক্রিকেটারকে।
সূত্র: দেশ রূপান্তর