শিরোনাম
দুর্নীতির দায়ে পশ্চিমবঙ্গের বরখাস্ত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হেফাজতে আছেন। ১০ দিনের এ হেফাজত শেষ হচ্ছে বুধবার। ইডি বলেছে, তাঁর হেফাজতের মেয়াদ আরও বাড়ানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আরও ১০ দিনের হেফাজতে নিতে চায় ইডি।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী হিসেবে পরিচিত মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতা মুখার্জিও ইডির হেফাজতে আছেন। পার্থ ও অর্পিতাকে জেরা করতে গিয়ে ইডি জানতে পেরেছে, অর্পিতার স্বপ্ন ছিল এ রাজ্যে একটি বিশ্বমানের ফিল্ম সিটি গড়ার। সেই লক্ষ্য নিয়ে পার্থকে সঙ্গী করে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। ফিল্ম সিটির জন্য নদীয়ায় জায়গাও দেখেছিলেন। সেই জায়গা কেনার জন্য অগ্রিম অর্থও প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্য শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হন দুজনই।
ভারতের বিশ্বমানের পাঁচটি ফিল্ম সিটি হলো হায়দরাবাদের রামুজি ফিল্ম সিটি, মুম্বাই ফিল্ম সিটি, বেঙ্গালুরুর ইন্নোভোটিভ ফিল্ম সিটি, নয়দা ফিল্ম সিটি এবং চেন্নাইয়ের এমজিআর ফিল্ম সিটি। এসব ফিল্ম সিটির ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গেও একটি অত্যাধুনিক ফিল্ম সিটি গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল পার্থ ও অর্পিতা। অর্পিতার স্বপ্ন ছিল ফিল্ম প্রযোজনা ও পরিচালনারও। এ লক্ষ্যে তিনি ঝুঁকেছিল তামিল ও ওডিশি ছবি নির্মাণ ও প্রযোজনার দিকে। ইডি তদন্ত করে জানতে পেরেছে, ওডিশার রাজধানী ভুবনেশ্বর গিয়েছিলেন অর্পিতা।
ইডির জেরায় অর্পিতা জানিয়েছেন, তাঁদের কালোটাকা সাদা করার জন্য আগস্ট মাসে একটি সংস্থা খুলে ফিল্ম সিটি গড়ার আবেদনও জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এর আগেই পার্থ-অর্পিতা ধরা পড়েন। অর্পিতার বেলঘরিয়া ও টালিগঞ্জের বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ কোটি রুপিসহ কয়েক কোটি রুপির সোনা ও বিদেশি অর্থ উদ্ধার করা হয়।
ইডির তদন্তে এ কথাও ফুটে উঠেছে, অর্পিতার হেফাজতে এত টাকা থাকায় তিনি ভয়ের মধ্যে ছিলেন। তাই তিনি চাইছিলেন বিপুল এই অর্থ বিনিয়োগ করে সাদায় রূপান্তর করতে। তাই সে লক্ষ্যে ২৫ থেকে ৩০টি ভুয়া ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন। এসব হিসাব খুলতে ব্যবহার করা হয়েছিল মৃত ব্যক্তিদের ভোটার পরিচয়পত্রও। অর্পিতা যাঁদের কাছ থেকে ফিল্ম সিটি গড়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে জমি কিনতে চেয়েছিলেন, যাঁদের অগ্রিম অর্থ বায়না দিয়েছিলেন, তাঁদের খোঁজ শুরু করেছে ইডি। আর এসব ভুয়া ব্যাংক হিসেবে আট কোটি রুপির সন্ধান মিলেছে। ইডির আবেদনে সেসব ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের দুটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এ দুজন এখন আদালতের নির্দেশে ইডির হেফাজতে সিজিও কমপ্লেক্সের কারাগারে অবস্থান করছেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের যে খাবার পরিবেশন করছে, তাতে একদম সন্তুষ্ট নন তাঁরা। পার্থ আবদার করেছেন, তাঁকে যেন খাসির মাংসের ঝোল আর তেলেভাজা কিছু খেতে দেওয়া হয়। আর অর্পিতাও দাবি করেছেন, তিনি খেতে চান শুকনা ফল আর ব্ল্যাক কফি। তবে কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, আদালতের নির্দেশে তাঁদের খাবারের চার্ট তৈরি করা হয়েছে। সেই চার্ট অনুযায়ী তাঁদের খাবার দেওয়া হচ্ছে। কারা কর্তৃপক্ষ এর বাইরে খাবার দিতে পারে না।
এখন প্রতিদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দেওয়া হচ্ছে সকালে এক কাপ লিকার চা ও দুটি ক্রিম ক্রেকার বিস্কুট। নাশতায় দেওয়া হচ্ছে ওটসের খিচুড়ি। এক ঘণ্টা পর দেওয়া হচ্ছে দুই ধরনের ফল। মধ্যাহ্নভোজে দেওয়া হচ্ছে ভাত, ডাল, দুই টুকরা মুরগির মাংসসহ পাতলা ঝোল। মধ্যাহ্নভোজের পর দেওয়া হচ্ছে মুসাম্বি লেবু। বিকেলে দেওয়া হচ্ছে মুড়ি ও বিস্কুট। আর রাতে দেওয়া হচ্ছে দুটি রুটি ও সবজি।
অর্পিতাকে দেওয়া হচ্ছে তেল-মসলাহীন খাবার। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দেওয়া হচ্ছে চিনি ছাড়া লিকার চা ও দুটি ক্রিম ক্রেকার বিস্কুট। নাশতায় দেওয়া হচ্ছে চারটি ব্রাউন ব্রেড, সেদ্ধ ডিম ও কলা। এক ঘণ্টা পর দেওয়া হচ্ছে দুই রকমের ফল।
মধ্যাহ্নভোজে দেওয়া হচ্ছে ভাত, ডাল, সবজি ও মাছ। বিকেলে চা ও বিস্কুট। আর রাতে দেওয়া হচ্ছে দুটি রুটি ও সবজি।
বেশ কিছুদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষক নিয়োগে এই রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, পরে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জমা হচ্ছিল ইডির কাছে। ইডিও তদন্ত শুরু করে পার্থর বিরুদ্ধে। ইডির দল হাজির হয় দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার পার্থর বাড়িতে। জেরা চলে টানা ১৯ ঘণ্টা। তারপর ২৩ জুলাই পার্থ গ্রেপ্তার হন ইডির হাতে। পরে পার্থর বান্ধবী অর্পিতার বেলঘরিয়া ও টালিগঞ্জ আবাসন থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৫০ কোটি রুপি।