ভারতের মহারাষ্ট্রে এক মাসেও মন্ত্রিসভা হয়নি

ফানাম নিউজ
  ৩১ জুলাই ২০২২, ০৮:০৬

এক মাস কেটে গেল, অথচ এখনো মহারাষ্ট্রে মন্ত্রিসভা গঠিত হলো না। রাজ্য চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে ও উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ। মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের অনুগামী শিবসৈনিকদের সঙ্গে বিজেপির টানাপোড়েন এর কারণ। এই অচলাবস্থার মধ্যে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করলেন রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। তাঁর এক মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে রাজ্যপালের অপসারণ পর্যন্ত দাবি করেছেন।

শিবসেনায় বিদ্রোহ ও ভাঙন ঘটিয়ে মহারাষ্ট্রের জোট সরকারের পতনের পর গত ৩০ জুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন একনাথ শিন্ডে। উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপি নেতা ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ। কিন্তু এক মাস কেটে গেলেও শিবসেনা ও বিজেপির মতান্তরের জন্য মন্ত্রিসভা গঠন করা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে এমন টালবাহানা এবং এভাবে সরকার পরিচালনার ঘটনা ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যে কখনো ঘটেনি।

জটিলতার কারণ প্রধানত দুটি। প্রথম কারণ, শিন্ডের বিদ্রোহে শামিল হয়ে শিবসৈনিকদের মধ্যে যাঁরা ঠাকরে পরিবারের বিরোধিতা করেন, তাঁদের অধিকাংশই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বের দাবিদার। ২৮৮ আসনবিশিষ্ট বিধানসভায় বিজেপির সদস্যসংখ্যা ১০৬। তার জোটসঙ্গী বহুজন বিকাশ আগাড়ির সদস্য তিনজন। শিন্ডের দিকে রয়েছেন শিবসেনার ৩৯ জন। তাঁদের প্রায় সবাই মন্ত্রী হতে চান। বিজেপি যেহেতু মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছে, তারা তাই অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করছে। জনহিতকর মন্ত্রণালয়ের দাবিদার হয়ে তারা গোটা রাজ্যে এমনভাবে ঘুঁটি সাজাতে চাইছে, যাতে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বাড়তি আসন পাওয়া যায়। একইভাবে শিন্ডে চাইছেন, প্রাধান্য এমন রাখতে, যাতে মারাঠাদের মধ্যে শিবসেনার প্রকৃত দাবিদার হয়ে উদ্ধব ঠাকরে ও তাঁর পরিবারের ক্ষমতা হ্রাস করতে পারেন। এই টানাপোড়েনের মীমাংসা গত এক মাসে করা সম্ভব হয়নি। যদিও শিন্ডে ও ফডনবিশ এই সময়ের মধ্যে ছয়বার দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও দলীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু দপ্তর বণ্টন চূড়ান্ত হয়নি।

এই রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে নতুন করে বিতর্কের শীর্ষে উঠে এলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। গতকাল শনিবার রাজ্যে এক অনুষ্ঠানে বিজেপির এই প্রবীণ নেতা বলেন, মহারাষ্ট্রকে দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী বলা হয়। কিন্তু এই রাজ্য, বিশেষ করে মুম্বাই ও থানে শহর থেকে গুজরাটি ও রাজস্থানিদের তাড়িয়ে দিলে কোনো টাকা অবশিষ্ট থাকবে না। অর্থনৈতিক রাজধানীও থাকবে না। রাজ্যপালের এই মন্তব্য জানাজানি হওয়ামাত্র বিভিন্ন মহল থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে রাজ্যপালের ক্ষমা দাবি করে বলেন, তিনি শুধু মারাঠা জনগণকে অপমানই করেননি, হিন্দুদের মধ্যেও বিভাজন সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। এই অপরাধের জন্য তাঁর শাস্তি হওয়া দরকার। 

মহারাষ্ট্রের মারাঠা মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের বিবৃতি দাবি করে উদ্ধব বলেন, এই নব্য হিন্দুরা কী ভাবছেন, জানা দরকার। দিল্লির পাঠানো এই রাজ্যপাল যদি এমন বিভাজন সৃষ্টি করেন, তবে তাঁকে ফেরত পাঠানো দরকার। সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশও। তিনি বলেছেন, আজ্ঞাবহ কোশিয়ারি একেবারেই হুঁশিয়ার নন। প্রদেশ সভাপতি নানা পাটোলেও রাজ্যপালের অপসারণ দাবি করেছেন।

মন্ত্রিসভা গঠন না করে মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীর রাজ্য চালানোর এই দৃষ্টান্তের মতোই অভিনব ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার উপাধ্যক্ষবিহীন থাকা। ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর এখনো পর্যন্ত শাসক বিজেপি লোকসভার উপাধ্যক্ষ নির্বাচন করেনি। সংসদীয় ভারতে এটা রেকর্ড।