শিরোনাম
অবশেষে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানের (পিটিআই) প্রার্থী চৌধুরী পারভেজ এলাহি।
প্রথমে উপনির্বাচনে বিপুল জয়ের পরেও আইনসভার ডেপুটি স্পিকারের বিতর্কিত রায়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ক্ষমতা দখল করতে ব্যর্থ হয়েছিল দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল।
তবে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) রাতে পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতের রায়ে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট পাঞ্জাবের ডেপুটি স্পিকারের সেই বিতর্কিত রায়কে ‘অসাংবিধানিক’ বলে ঘোষণা করেছে। আর এতেই জনসংখ্যায় পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ এই প্রদেশটির ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে ইমরানের পিটিআই।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী পারভেজ ইলাহীকে পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের ছেলে হামজা শাহবাজ তার পদ হারিয়েছেন।
শীর্ষ আদালতের এমন সিদ্ধান্তের পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন পারভেজ ইলাহী। রাজধানী ইসলামাবাদের আইওয়ান-ই-সদরে ইলাহীকে শপথবাক্য পাঠ করান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভী।
অবশ্য এর আগে আদালতের রায়ের পরও ইলাহীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথবাক্য পাঠ করাতে অস্বীকার করেন পাঞ্জাবের গভর্নর বালিঘুর রেহমান। আর এরপরই শপথ গ্রহণ করতে লাহোর থেকে কেন্দ্রীয় রাজধানীতে ছুটে যান চৌধুরী পারভেজ ইলাহী।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে ইলাহীর শপথের ব্যবস্থা করার জন্য পাঞ্জাবের গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে প্রয়োজনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভীকে হস্তক্ষেপ করতে ‘পরামর্শ’ দেয় তিন বিচারপতির ওই বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, পাঞ্জাবের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া ছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
এই রায় হামজা শেহবাজের বাবা তথা পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের কাছে বড় এক ধাক্কা। পিএমএল (এন)-এর প্রধান সহযোগী ‘পাকিস্তান পিললস পার্টি’ (পিপিপি)-র প্রধান তথা দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিও এর ফলে অস্বস্তিতে পড়লেন বলে মনে করা হচ্ছে।
রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে ‘বিচারিক অভ্যুত্থান’ বলে কড়া সমালোচনা করেছেন তথ্যমন্ত্রী মারিয়াম আওরঙ্গজেব।
উল্লেখ্য, ৩৭১ সদস্যের পাঞ্জাব প্রাদেশিক আইনসভায় শুক্রবার ভোটাভুটিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফে ছেলে হামজা শাহবাজ পেয়েছিলেন ১৭৯ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআই নেতা ইলাহী পেয়েছিলেন ১৮৬ ভোট।
কিন্তু আইনসভার ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মাজারি পাকিস্তান মুসলিম লীগ কায়েদ-ই-আজম (পিএমএল-কিউ)-এর ১০টি ভোট অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর তিনি হামজাকে তিন ভোটে জয়ী ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্টে ডেপুটি স্পিকারের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল ইমরানের দল।
সম্প্রতি পাঞ্জাব প্রদেশের আইনসভার ২০টি আসনের উপনির্বাচনে ১৫টিতেই জয় পেয়েছিল ইমরানের দল পিটিআই। সেখানে পাঞ্জাবের ক্ষমতায় থেকেও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) বা পিএমএল (এন) জেতে মাত্র চারটিতে! একটিতে জিতেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এর ফলে পাঞ্জাব আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পায় ইমরানের পিটিআই। দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির অধিবেশন ডেকে নতুন করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের নির্দেশ দেয় লাহোর হাইকোর্টও।
প্রসঙ্গত, পাঞ্জাবের আইনসভার ওই ২০টি আসন ছিল ইমরানের পিটিআইয়ের দখলেই। কিন্তু গত মার্চে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের পাশাপাশি পাঞ্জাব আইনসভাতেও ইমরানের দলে ভাঙন দেখা দেয়। বিদ্রোহীরা শরীফদের সঙ্গে হাত মেলানোয় মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারাতে হয় পিটিআই নেতা উসমান বুজদারকে।
পরে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন হামজা শাহবাজ। কিন্তু এরপর ইমরানের আবেদন মেনে নিয়ে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন দলত্যাগী সদস্যদের বরখাস্ত করে উপনির্বাচন ঘোষণা করেছিল। আর সেখানেই বাজিমাত করে পাঞ্জাবের মসনদ ফের দখলে নিলেন ইমরান খান। এর মধ্য দিয়ে ইমরান খান পাকিস্তানের জাতীয় ক্ষমতায় ফেরার পথেও অনেকটাই এগিয়ে গেলেন। কারণ পাঞ্জাব প্রদেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে তারাই পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতিতেও এগিয়ে থাকে।