শিরোনাম
‘ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান’ এর সরকার তো দূরের কথা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও হতে পারে চরম বিপদ!
সম্প্রতি জনগণের উদ্দেশ্যে ‘শারিয়া দায়িত্ব’ নামে একটি নির্দেশাবলী প্রকাশ করেছেন আফগান তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ। যেখানে তালেবান শীর্ষনেতা মোল্লা হিবাতুল্লা আখুন্দজাদার পক্ষ থেকে জনগণকে জানানো হয়েছে, তালেবান সরকারের কর্মী এবং কর্মকর্তাদের নামে ‘অযৌক্তিক’ বা ‘বাস্তব চিত্রের পরিপন্থী’ এমন বিষয়ে নিন্দা করলে কড়া শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে তাদের। কিন্তু কোন ধরনের বক্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ বা ‘বাস্তবের পরিপন্থী’ বলা হবে তা অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি।
সাধারণত দেশের সাধারণ নাগরিকরা সরাসরি কেউ তারেবানি শাসকদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস না-দেখালেও টিভির পর্দায় নানা বিতর্কে কিংবা স্যোশাল মিডিয়ায় অনেক সময়েই অনেক বিশেষজ্ঞ তালিবানি নীতির কটাক্ষ করে থাকেন। বিশেষত, মেয়েদের শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে রাখা এবং সামগ্রিক ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ তুলে বারবারই সমালোচনার মুখে ফেলা হয় তালেবান শাসকদের। অনেকের মতে, এদিনের এই ‘শাসানি’ আদতে সেই সমালোচকদের উদ্দেশ্যেই।
একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সম্প্রতি খোলাখুলি এই ‘সতর্কবাণী’ জারি করা হলেও আদতে অনেক আগে থেকেই সমালোচকদের শাস্তি দেওয়ার রীতি পালন করে আসছে তালেবান। স্যোশাল মিডিয়ায় তালেবানের বিরুদ্ধে কথা বলায় গ্রেপ্তার, জেল এবং নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। এমনকি প্রাণ সংশয়ও হয়েছে অনেকের।
সম্প্রতি প্রচারিত ওই ফতোয়ায় অবশ্য তাদের এই পদক্ষেপের পেছনের যুক্তিরও বর্ণনা দিয়েছে তালেবান। সংগঠনের দাবি, এই ধরনের কাজ (সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা) নেতিবাচক প্রচার হিসেবেই ধরা হয়। যা পরোক্ষ ভাবে ‘শত্রুদের ইন্ধন জোগায়’। যদিও তাদের এই শত্রুরা ঠিক কারা, তা অবশ্য খোলসা করেনি তালেবান। তবে ওই ফতোয়ায় পরিষ্কার লেখা হয়েছে, তালেবানি সৈনিকদের গায়ে হাত দেওয়া, তাদের কাপড় ধরে টানা বা তাদের কুকথা বলা- সবই এবার থেকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর মিডিয়া এবং সাধারণদের এই নতুন ফতোয়া মেনে চলার কথা জানিয়ে তালিবানের মন্তব্য, এটা তাদের ‘শারিয়া দায়িত্ব’!
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে কাবুলে আয়োজিত ‘তালেবান পণ্ডিতদের মহাসমাবেশ’-এ হেরাত থেকে আসা মুজিবুর রহমান আনসারি নামে এক তালেবান নেতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে তালেবান-বিরোধীদের মাথা কেটে নেওয়ার ফতোয়া আনার দাবি জানিয়েছিলেন। সরাসরি সে পথে না-হাঁটলেও এবারের এই ফতোয়া যে বাক্স্বাধীনতার কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিল তা নিয়ে একমত আফগানিস্তানের জনতা।