শিরোনাম
রপ্তানির জন্য প্রস্তুত থাকা প্রায় বিশ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য আটকা পড়ে আছে ইউক্রেনে।
চলতি বছরের ফসল তোলার পর এর পরিমাণ ৭৫ মিলিয়ন টনে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। খবর বিবিসির।
খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ লরা ওয়েলেসলি জানিয়েছেন, দেশটি বছরে প্রায় ৮৬ মিলিয়ন টনের মতো খাদ্যশস্য উৎপাদন করে যার ত্রিশ ভাগ তোলাই হয় না।
এবার যুদ্ধের কারণে ফসল তোলার পরিমাণ আরও কম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে পণ্যবাহী কার্গোর মাধ্যমে বাদবাকি বিশ্বে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেয়ার জন্য গত শুক্রবার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায়।
যদিও চুক্তি সই হওয়ার পরদিনই ইউক্রেনের বৃহৎ একটি বন্দর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে ওঠেছে।
বন্দর শহর ওডেসাতে চালানো এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে হওয়া এই সমঝোতার ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে।
এসব বন্দরগুলোর ওপর রাশিয়ার অবরোধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম দ্রুতগতিতে বাড়ছিল এবং দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছিল।
বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের গমের বড় ক্রেতা মিশর। দেশটি ৩৬ লাখ টনের বেশি আমদানি করে ইউক্রেন থেকে।
দ্বিতীয় বড় ক্রেতা হলো ইন্দোনেশিয়া যারা বছরে ৩২ লাখ টন গম আমদানি করে। আর তৃতীয় বড় ক্রেতা দেশ হলো বাংলাদেশ, যার আমদানির পরিমাণ হলো ২৩ লাখ টন।
এর বাইরে দশ লাখ টনের সামান্য বেশি পরিমাণ করে আমদানি করে তুরস্ক, ইয়েমেন ও ফিলিপাইন। এছাড়া মরক্কো, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও ইথিওপিয়া ইউক্রেন থেকে গম নিয়ে থাকে।
ইউক্রেন বিশ্বের চতুর্থ খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বের ৪২ ভাগ সূর্যমুখী তেল উৎপাদন হয় এই দেশটিতে। এছাড়া মোট ভুট্টার ১৬ ভাগ ও ৯ ভাগ গম তারাই উৎপাদন করে।
এর বাইরে বিশ্বে গমের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক রাশিয়া থেকে রপ্তানি কমে গেছে এই যুদ্ধের জের ধরে।
যদিও রাশিয়ার কৃষির ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমারা দেয়নি, কিন্তু পেমেন্ট সিস্টেমে প্রভাব পড়ার পাশাপাশি ইন্স্যুরেন্স ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে রাশিয়ার রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
রাশিয়ার কৃষিপণ্যবাহী জাহাজগুলোকেও অবশ্য ইউরোপের বন্দরগুলোতে এখনো কোন বাধা দেয়া হচ্ছে না।
আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক জানিয়েছে, আফ্রিকার প্রয়োজনীয় গমের ৪০ ভাগই সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন।
কিন্তু যুদ্ধের কারণে প্রায় তিন কোটি টন খাদ্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে আফ্রিকায়। যার ফলে পুরো মহাদেশজুড়ে খাদ্যের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
নাইজেরিয়ায় পাস্তা ও ব্রেডের দাম বেড়েছে অন্তত ৫০ শতাংশ।
একইভাবে ইয়েমেন প্রতিবছর দশ লাখ টনেরও বেশি গম আমদানি করে ইউক্রেন থেকে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সরবরাহ না থাকায় জানুয়ারি থেকে মে সময়কালে ময়দার দাম বেড়েছে ৪২ ভাগ আর ব্রেডের ২৫ ভাগ।
সিরিয়া ইউক্রেনের গমের আরেক বড় ক্রেতা দেশ। সেখানে ব্রেডের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
তবে সর্বশেষ যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো সেই খবরে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতে শুরু করেছে।
যদিও লরা ওয়েলেসলি বলছেন যে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জাহাজীকরণ না হলে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অনেক দেশেই সংকট দেখা দেবে।