শিরোনাম
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা করতে তেহরানে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে গিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।
পুতিনকে বহনকারী বিমানটি সম্প্রতি ইরানের রাজধানী তেহরানে অবতরণ করে। এ সফরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পুতিন।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পর এটি প্রেসিডেন্ট পুতিনের দ্বিতীয় বিদেশ সফর। পুতিনের এবারের ইরান সফরকে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া এখন আসলে ইরান, চীন এবং তুরস্কের মতো দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি করতে চায়, যাতে করে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের কোনঠাসা করার যে চেষ্টা পশ্চিমারা করছে, তার বিরুদ্ধে তারা পাল্টা কিছু করতে পারে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো দেখাতে চাইছেন, পশ্চিমা দেশগুলো যতই চেষ্টা করুক, তাদের একঘরে করা যায়নি এবং তাদের অনেক আন্তর্জাতিক মিত্র আছে।
ইরান এবং রাশিয়া- দুটি দেশই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার শিকার। কাজেই দুটি দেশের একটা অভিন্ন কৌশলগত অবস্থান নেয়া, এবং মিত্র হওয়ার সুযোগ এখানে আছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্যদিকে ইরানের দিক থেকেও রাশিয়ার মতো একটা দেশের সমর্থন এই মূহুর্তে খুব দরকার। কারণ মাত্রই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন মধ্যপ্রাচ্য সফর করে এসেছেন, সেখানে ইসরাইল এবং সৌদি আরবের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের মাখামাখি যেভাবে বাড়ছে এবং তারা ইরানের বিরুদ্ধে জোট বাঁধছে, সেটা ইরানকে উদ্বিগ্ন করছে।
তাদের আশংকা, এটি মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য তাদের বিপক্ষে নিয়ে যেতে পারে। কাজেই ইরান চেষ্টা করছে, রাশিয়ার সহায়তায় পাল্টা কিছু করা যায় কি না।
কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হবে
প্রেসিডেন্ট পুতিনের একজন পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পুতিনের যেসব কথা হবে, তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়ে এই দুই দেশের আছে অভিন্ন অবস্থান। এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে, সিরিয়ার সংঘাত, জ্বালানি এবং সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা, এরকম নানা বিষয় আছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই সফরের আগেই ইরানের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি গ্যাযপ্রমের একটা সমঝোতা স্মারক হয়েছে। এটা প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের দাম সাংঘাতিক বেড়ে গেছে, ইরান এর কিছু সুফল পাচ্ছে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়া তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বীও হয়ে উঠেছে। যেমন চীন এখন ইরানের চাইতে রাশিয়ার তেল বেশি কিনছে, কারণ রাশিয়া তাদের কম দামে দিচ্ছে। কাজেই জ্বালানি ক্ষেত্রে দুই দেশ কিভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে সহযোগিতা করতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা হবে।
অন্যদিকে, ইরান তাদের তৈরি ড্রোন রাশিয়াকে সরবরাহ করতে চায়, এরকম একটা খবরও আছে। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টই কিছুদিন আগে এরকম একটা কথা বলেছেন। রাশিয়া এরকম ড্রোন পেতে আগ্রহী। কাজেই সেটা নিয়েও হয়তো দুদেশের কথা হতে পারে, তবে সরকারিভাবে এসব বিষয়ে কিছু এখনো জানানো হয়নি।
এর বাইরে সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে, কারণ রাশিয়া এবং ইরান, উভয়েই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানও এখন তেহরানে। সেখানে রাশিয়া, ইরান এবং তুরস্কের তিন নেতার মধ্যে একটা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। তিন নেতার মধ্যে মূলত সিরিয়ায় সহিংসতা কমানো নিয়ে কথা হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন তেহরানে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করবেন। সেখানে মূলত কথা হবে ইউক্রেন থেকে কিভাবে আবার খাদ্য শস্য রফতানি শুরু করা যায় তা নিয়ে।
ইউক্রেন থেকে খাদ্য শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বে যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, সেখানে তুরস্ক মধ্যস্থতার চেষ্টা করছিল। এ সপ্তাহের শেষে রাশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক এবং জাতিসংঘ একটা চুক্তিতে সই করতে পারে, যাতে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে আবার ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরু করা যায়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা