শিরোনাম
সরকার ও দলের ভেতর প্রবল চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। অনেকদিন থেকেই বিতর্ক সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দলীয় সহকর্মীদের আস্থা হারানোয় শেষপর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়তে হলো তাকে। অবশ্য পদত্যাগের পর তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থাকছে জনসনের হাতেই। তবে তার বিদায়টা যে সুখের হলো না, তা বলাই বাহুল্য।
জুলাই ২০১৯: নিরঙ্কুশ বিজয়
থেরেসা মে’র পদত্যাগের পর কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান নির্বাচিত হন ব্রেক্সিটপন্থি নেতা বরিস জনসন। ওই নির্বাচনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টকে বিপুল ভোটে হারিয়েছিলেন তিনি। পরে জনসনকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
জানুয়ারি ২০২০: ব্রেক্সিট হিরো
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে ৮০ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করেন জনসন। এর ফলে পার্লামেন্টের মাধ্যমে ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকরের সুযোগ পান তিনি। ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি গণভোটের সাড়ে তিন বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাজ্য।
মার্চ ২০২০: মহামারির আঘাত
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জেরে ২৩ মার্চ যুক্তরাজ্যজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন জনসন। চারদিন পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি করোনা পজিটিভ এবং কোভিডের মৃদু উপসর্গে ভুগছেন। ৫ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরেরদিন পাঠানো হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখানে দুই বিদেশি নার্সের সেবায় সুস্থ হয়ে ওঠেন বলে জানান বরিস জনসন।
এপ্রিল ২০২১: ওয়ালপেপারগেট কেলেঙ্কারি
মহামারি মোকাবিলায় সরকারের কার্যক্রম নিয়ে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয় জনসনকে। ব্যবস্থা নেওয়ায় ধীরগতি এবং বিভিন্ন সময়ে পার্লামেন্টে মিথ্যা বলেছেন বলে অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ডাউনিং স্ট্রিটের সরকারি বাসভবন সংস্কারে অবৈধ অর্থায়নের জন্যেও অভিযুক্ত হন জনসন।
মে ২০২১: নির্বাচনে সাফল্য
উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডে লেবার পার্টির ঘাঁটি বলে পরিচিত হার্টলপুলের দখলসহ উপনির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের বিপক্ষে বড় জয় পায় জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি।
ডিসেম্বর ২০২১: পার্টিগেট কেলেঙ্কারি
লকডাউনের মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিটে একাধিক বেআইনি পার্টি হওয়ার খবর সামনে আসতে থাকে গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে। এতে সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধের কারণে অসুস্থ বা মৃত প্রিয়জনকে দেখতে যাওয়া থেকে বঞ্চিত লোকজন ক্ষোভপ্রকাশ করে জনসনকে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ বা ভণ্ড বলতে শুরু করে।
একের পর এক পার্টির খবর প্রকাশ্যে আসতে থাকলে শেষপর্যন্ত আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়। গত ১২ এপ্রিল বরিস জনসন জানান, পার্টি করে আইনভঙ্গ করায় তাকে জরিমানা করেছে পুলিশ। যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন কোনো প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের জরিমানা দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
অভিযোগের বিষয়ে একেকবার একেক ধরনের ব্যাখ্যা দিলেও বরিস জনসন দলীয় এমপিদের আশ্বস্ত করেন, তিনি পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেননি, যেমনটি হলে পদত্যাগ করার নিয়ম।
মে ২০২২: নির্বাচনে হার
পার্টিগেট কেলেঙ্কারি বরিস জনসনের জনপ্রিয়তায় ধস নামায়। তবে এর পেছনে দীর্ঘদিনের বন্ধু ওয়েন প্যাটারসনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচানোর চেষ্টাও কম দায়ী নয়। ওয়েনের বিরুদ্ধে অবৈধ লবিংয়ের অভিযোগ উঠলেও তার পক্ষ নেন জনসন। এর ফলে ৫ মের স্থানীয় নির্বাচনে কনজারভেটিভ প্রার্থীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ব্রিটিশ ভোটাররা।
ব্রেক্সিট হিরো থেকে কলঙ্কিত নেতা: বরিস জনসনের রাজনৈতিক উত্থান-পতন
জুন ২০২২: আস্থা ভোট
জনসনের নানা কেলেঙ্কারিতে বিরক্ত বিরোধীরা পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট আহ্বান করে। গত ৬ জুন সেই ভোটে কোনোমতে টিকে যান জনসন। তবে নিজ দলের ৪০ শতাংশের বেশি এমপি তার বিপক্ষে ভোট দেন।
যৌন কেলেঙ্কারি
একঝাঁক কনজারভেটিভ এমপির যৌন কেলেঙ্কারি বরিস জনসনের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেয়। এক এমপি ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হন এবং এক কিশোরকে যৌন নির্যাতনের দায়ে গত মে মাসে এক সাবেক এমপিকে ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত জুন মাসে বিরোধী দল দুটি উপনির্বাচনে জয়লাভ করে, যা আগে যৌন অসদাচরণে অভিযুক্ত কনজারভেটিভ এমপিদের দখলে ছিল।
বিতর্কের মুখে গত ৫ জুলাই জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে বরিস জনসন বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ক্রিস পিনসারকে ডেপুটি চিফ হুইপ নিয়োগ দিয়ে ভুল করেছেন। নিয়োগের আগেই পিনসারের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ সম্পর্কে অবগত ছিলেন জানিয়ে তোপের মুখে পড়েন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
পদত্যাগের ঝড়
কেলেঙ্কারিতে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৫ জুলাই অল্প সময়ের ব্যবধানে পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। এরপর একে একে পদত্যাগ করেন আরও অর্ধশতাধিক মন্ত্রী, জুনিয়র মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সহযোগী। তাদের সবাই জনসনকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। প্রথমে রাজি না হলেও চাপের মুখে শেষপর্যন্ত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা