শিরোনাম
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক বিরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি স্বীকার করেছেন, নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)-কে সম্প্রসারণের একটি সুযোগ তিনি দিয়েছেন।
একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের লাগামের মধ্যে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র নিজের বৈদেশিক প্রভাবকে কাজে লাগাচ্ছে।
মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক এখবর জানিয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত জোটে যোগ দেওয়ার জন্য ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ন্যাটো। সিরিজ হুমকি দিয়ে এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছিল রাশিয়া। কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন যে, ইউক্রেনে পুতিনের আক্রমণ জোটটিকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করছে। তারা উল্লেখ করছেন যে, যুদ্ধটি রাশিয়ার জন্য উল্টো ফল নিয়ে আসছে। কারণ ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের একটি অন্যতম কারণ ছিল ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান ঠেকানো। আর যুদ্ধের ফলে শুধু ইউক্রেন নয়, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় সুইডেন ও ফিনল্যান্ড এখন ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছে।
সম্প্রতি ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, পুতিন যা চেয়েছিলেন তার উল্টো ঘটছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে রুশ প্রেসিডেন্ট ন্যাটো জোটের প্রকৃতি নিয়ে সমালোচনা করেন। কিন্তু তিনি স্বীকার করেন যে, রাশিয়া হয়ত ন্যাটো সম্প্রসারণের সুযোগ দিয়েছে।
৬ষ্ঠ কাস্পিয়ান সম্মেলনে সাংবাদিকদের পুতিন বলেন, সব সময় আমাদের অবস্থান হচ্ছে ন্যাটো হলো শীতল যুদ্ধের অবশেষ। জোটের সদস্য দেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একটি হাতিয়ার হিসেবেই কেবল এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটিই জোটের একমাত্র মিশন। আমরা তাদের সুযোগ করে দিয়েছি, আমি বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছি। তারা জোরেশোরে এই যুক্তি কাজে লাগাচ্ছে এবং খুব কার্যকরভাবে তাদের তথাকথিত মিত্রদের পাশে টানছে।
সম্প্রতি ন্যাটো জোটে শীতল যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় রদবদলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ন্যাটোর প্রায় ৪০ হাজার হাই রেডিনেস ফোর্সের সংখ্যা সাতগুণ বাড়িয়ে ৩ লাখ করার ঘোষণা দিয়েছেন মহাসচিব।
যদিও পুতিন বলেছেন সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটো জোটে যোগদান নিয়ে তার কোনও আপত্তি নেই। কারণ ইউক্রেনের মতো দেশ দুটির সঙ্গে তাদের কোনও ভূখণ্ডগত ইস্যু বা বিরোধ নেই। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা তৈরি করছে।
কিন্তু দেশ দুটিকে হুঁশিয়ার করে পুতিন বলেন, ‘তবে তাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে আগে কোনও হুমকি ছিল না, এখন, যদি সেখানে সামরিক দল এবং অবকাঠামো মোতায়েন করা হয়, তবে আমাদের সদয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে এবং যে অঞ্চলগুলি থেকে আমাদের প্রতি হুমকি তৈরি করা হয়েছে তাদের জন্য একই হুমকি তৈরি করতে হবে’।
পুতিন আরও বলেন, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পর হেলসিঙ্কি এবং স্টকহোমের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক খারাপ হওয়া এড়ানো যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু এখন কিছু উত্তেজনা থাকতে পারে, অবশ্যই থাকবে। আমাদের জন্য হুমকি থাকলে তা অনিবার্য’।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ন্যাটো ইউক্রেনকে রুশবিরোধীতে পরিণত করছিল। রাশিয়াকে আক্রমণের জন্য ইউক্রেনকে তারা একটি পাদভূমি হিসেবে ব্যবহার করছিল।
দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রত্যাশা করে আসছে ইউক্রেন। কারণ এর ফলে রাশিয়ার আক্রমণ থেকে ভবিষ্যতে সুরক্ষার নিশ্চয়তা পাবে দেশটি। ইউক্রেনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় এটিকে গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবে তুলে ধরেছে মস্কো। জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, ইউক্রেন হয়ত কখনও ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। কিন্তু বুধবার ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আশাবাদের কথা বলেছেন। তারা বলছেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের মতো ইউক্রেনও দ্রুত জোটটিতে যোগদান করতে পারবে হয়ত। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানে রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধ বৃদ্ধি এবং বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন।