শিরোনাম
পূর্ব ইউরোপে তিন লাখ সেনা মোতায়েন করতে চাইছে ন্যাটো। এই সেনারা মূলত রাশিয়ার সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের সীমান্তে নজরদারি চালাবে বলে জানিয়েছেন ন্যাটোপ্রধান স্টলটেনবার্গ। মঙ্গলবার মাদ্রিদে শুরু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বার্ষিক সম্মেলন। তার আগে একথা জানালেন ন্যাটো প্রধান স্টলটেনবার্গ।
সোমবার ব্লাসেলসে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানেই তিনি একথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর এত বড় উত্তেজনা আর তৈরি হয়নি। সম্প্রতি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবারই মাদ্রিদে ন্যাটোর বার্ষিক সভা শুরু হবে। জার্মানির ব্যাভারিয়া থেকে জি-৭ এর নেতারা সেখানে যোগ দিতে যাবেন। তার আগে ন্যাটো বৈঠকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তার রূপরেখা জানান স্টলটেনবার্গ।
তিনি বলেছেন, ন্যাটোর এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই ন্যাটো ৪০ হাজার সেনা পূর্ব ইউরোপের স্ট্র্যাটেজিক জায়গায় মোতায়েন করেছিল। এবার সেই সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
থিংকট্যাংক গ্লোবগ্লোবসেকের প্রধান জানিয়েছেন, ন্যাটোর এই পদক্ষেপ এই সময়ের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার কথায়, ফ্রান্স ইতিমধ্যেই রোমানিয়ায় সেনা এবং যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। এবাবেই গোটা পূর্ব ইউরোপ ঘিরে ফেলতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
২০০৬ সালে ন্যাটোর বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, প্রতিটি সদস্য দেশ নিজেদের জিডিপি-র দুই শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করবে। বারাক ওবামার সময় মার্কিন সামরিক বাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন জিম টাউনসেন্ড। তিনি জানিয়ছেন, ন্যাটো ওই সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে দেখা যেত সব সদস্য তা মানছে না। এবারের সভায় সে বিষয়ে ফের আলোচনা দরকার। সমস্ত রাষ্ট্র যাতে ন্যাটোয় সমান বিনিয়োগ করে, তা দেখা দরকার। ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত’ সৈন্যের সংখ্যা প্রায় দশগুণ বাড়াচ্ছে ন্যাটো
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট তাদের ‘যুদ্ধ করতে প্রস্তুত’ এমন সেনা সংখ্যা বিপুল সংখ্যায় বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর ন্যাটো জোটের সম্মিলিত প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে একে সবচেয়ে বড় পুনর্গঠন বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
ন্যাটো জোটের মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ বলছেন, এ জোটের ‘দ্রুত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’ সৈন্যের সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে প্রায় দশগুণ বাড়িয়ে ৩ লক্ষাধিকে উন্নীত করছে। এটি একটি নতুন কৌশলগত পরিকল্পনা এবং এ সপ্তাহেই মাদ্রিদে একটি শীর্ষ সম্মেলন হবে যেখানে এটা অনুমোদিত হতে পারে।
স্টোলটেনবার্গ বলছেন, ইউরোপের নিরাপত্তার প্রতি রাশিয়ার প্রত্যক্ষ হুমকির পরই এই সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তার কথায়, নতুন এই ‘সামরিক ব্লুপ্রিন্ট’ পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে উন্নত করা হবে।
ন্যাটোর এই ‘র্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্স’ হচ্ছে স্থল, নৌ ও বিমান সেনা ও সরঞ্জামের সমন্বয়ে তৈরি করা একটি বাহিনী - কোন আক্রমণ হলে যাদেরকে দ্রুতগতিতে মোতায়েন করা যাবে। ২০১৪ সালের আগে এ বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ১৩,০০০ - আর এখন তা বেড়ে ৪০,০০০ হয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ অভিযানের পর এই সৈন্যদের ইতোমধ্যেই লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডে উচ্চ-প্রস্তুতিমূলক অবস্থায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি ও স্লোভেনিয়ায় আরো 'যুদ্ধের জন্য তৈরি' সেনাদল মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।
স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তীকালে ২০১০ সালে ন্যাটো জোট রাশিয়ার ব্যাপারে নতুন অবস্থান নিয়েছিল। রাশিয়াকে তখন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কৌশলগত অংশীদার’ বলা হতো। তবে এখন তাও বদলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্টোলটেনবার্গ।
তিনি বলেন, ‘ন্যাটো জোটের নিরাপত্তা ও মূল্যবোধের প্রতি সবচেয়ে বড় ও প্রত্যক্ষ হুমকি হচ্ছে রাশিয়া’। তবে নতুন পরিকল্পনাটিতে এই প্রথমবারের মতো ন্যাটো জোটের প্রতি চীনের চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও থাকবে।
স্টোলটেনবার্গ বলেন, ন্যাটো জোটের অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষাকে আরো শক্তিশালী করা হবে, জোটের পূর্বদিকের সদস্য দেশগুলোতে যোদ্ধা গ্রুপগুলোকে ব্রিগেড স্তর পর্যন্ত বাড়ানো হবে, আগে থেকে মোতায়েন করা সরঞ্জামগুলোও উন্নত করা হবে।