শিরোনাম
শত্রুরাষ্ট্রের নেতার শরীর, পোশাক নিয়ে এই প্রথম কুরুচিকর মন্তব্য শুনল বিশ্ব। সেটিও আবার পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়কদের মুখে! জি-৭ খ্যাত সাত মহারথীর মিলনমেলাতেই শুরু বিশ্বরাজনীতির এই বিকৃত অপচর্চা।
জার্মানির আল্পস পর্বতের পাদদেশের প্রাকৃতিক নৈসর্গে শুরু হওয়া সম্মেলনের প্রথম দিনেই পরনিন্দা, পরচর্চায় মেতে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, কানাডা, জাপান, ইতালি, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় কমিশনের নেতারা। ব্যক্তি আক্রমণের বিষে কলুষিত করলেন নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। রাজনীতির রাজচর্চা ভুলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনের সুঠাম শরীর ও তার পোশাকরুচি নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেন।
ঘটনার শুরুটাও বেশ নাটকীয়ই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রহীন হোটেলে ‘শ্লস এলমাও’র লম্বা কনফারেন্স কক্ষে পাতা গোলটেবিলে বসেছেন (মাঝ থেকে) ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি। সামনে কয়েক ডজন সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার। বসেই হোটেলের ‘এসি নেই’ ঐতিহ্য নিয়ে ঠাট্টায় নামেন বরিস জনসন। জ্যাকেট খুলব নাকি রাখব? বলেই হাসতে হাসতে সবার দিকে একবার তাকালেন। আবার বললেন, ‘আমরা কী আমাদের কাপড় খুলতে পারব?’ তিনি বলছেন। সবাই হাসছেন। ঠোঁট টিপে মিটিমিটি হাসছেন ডানে বসা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের অবকাশকালীন কিছু ছবি ছিল এই ঠাট্টার মূল উৎস। মাথায় কাউবয় টুপি, প্যান্ট আর হাতের বর্ষিতে ঝুলছে মাছ। কিংবা চোখে রোদ চশমা আর হাফপ্যান্ট পরে চরে বেরাচ্ছেন ঘোড়ায়। রাশিয়ার সরকারি গণমাধ্যম, তার ভ্রমণকালীন কিছু ছবি প্রকাশ করেছিলেন ইন্টারনেটে। সেই ছবিই এখানে পরিহাসের পণ্য।
বরিসের ঠাট্টায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান ছাড়া আর কেউ ফোড়ন না কাটলেও উপভোগ করেছেন সবাই। বরিসের সুর ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ছবি (তোলবার আগ) পর্যন্ত অপেক্ষা করি।’ সঙ্গে সঙ্গেই হেসে ওঠেন বাকিরা। বরিস আরও বলেন, আমাদের দেখাতে হবে যে আমরা পুতিনের থেকে শক্তিশালী। প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো উত্তরে বলেন, আমরা খালি গায়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ার প্রদর্শনী করতে যাচ্ছি। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন ঠাট্টার ছলে এ সময় বলেন, ঘোড়ায় চড়াই সবচেয়ে উত্তম। পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, আমাদের পেশি দেখানো প্রয়োজন। জি-৭ সম্মেলনের মুখরোচক এ অশালীন ঠাট্টা ভারী হয়ে উঠেছে সমালোচনাতেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশ্বের অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলোর মঞ্চে, কাউকে উদ্দেশ করে হাসি-ঠাট্টা করা সুরুচির পরিচয় দেয় না। এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্মেলনে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্যতা পায় না। রাজনীতির বিশ্বমঞ্চে এমন চিত্র খুব বেমানান। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবা সমকামী মানুষের মধ্যে বিয়ের বৈধতা দেন। জিম্বাবুয়ের তখনকার প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে ঠাট্টার ছলে বিয়ের প্রস্তাব দেন তাকে।