সেভেরোদোনেৎস্ক পুরোপুরি রুশ নিয়ন্ত্রণে, কী বার্তা দিচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ

ফানাম নিউজ
  ২৭ জুন ২০২২, ১১:২০

কয়েক সপ্তাহের ভয়াবহ লড়াইয়ের পর অবশেষে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর সেভেরোদোনেৎস্ক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রুশ বাহিনী। কৌশলগত এ শহরের নিয়ন্ত্রণ মারিউপোলের পর রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর বিবিসি ও আল-জাজিরার।

কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল সেভেরোদোনেৎস্ক শহর। ব্যাপক গোলাবর্ষণ আর বিমান হামলায় প্রাচীন এই শিল্পনগরী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত সরে আসার ইঙ্গিত দিয়ে ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা বলেন, এই ধ্বংসস্তূপ রক্ষা করতে গেলে ব্যাপক প্রাণহানি হবে।

রাশিয়া সেভেরোদোনেৎস্কের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিশ্চিত করে। এরপর গত শনিবার রাত্রিকালীন ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘নৈতিক ও মনোবলের’ দিক বিবেচনায় দেশের জন্য এটি একটি কঠিন দিন।

জেলেনস্কির ভাষণে লুহানস্ক অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহরটির নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি। এতে কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে রাশিয়া। অভিযানের শুরুর দিকে কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হয় রুশ বাহিনী। পরে দনবাস হিসেবে পরিচিত ইউক্রেনের বিস্তৃত পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ওপর নজর দেয় মস্কো।

দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত দনবাস অঞ্চল। দুটির যেকোনো একটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকে জনগণের সামনে সত্যিকারের অর্জন হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ পাবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুরু দিকের ব্যর্থতার পর এটা তাঁর জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল।

সেভেরোদোনেৎস্কের পর যমজ শহর হিসেবে পরিচিত নিকটবর্তী লিসিচানস্ক শহরে এখন নজর রুশ বাহিনীর। এটি লুহানস্কের অবশিষ্ট একমাত্র শহর, যেটি এখন পর্যন্ত ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। পাহাড়ি ধরনের উঁচু এলাকায় অবস্থিত শহরটিতে ইতিমধ্যে রুশ বাহিনী ব্যাপক হামলা শুরু করেছে।

রুশসমর্থিত যোদ্ধাদের মুখপাত্র আন্দ্রেই মারোচকো বলেছেন, লিসিচানস্ক ও সেভেরোদোনেৎস্ক শহর রক্ষায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রচেষ্টা হবে ‘অর্থহীন ও নিষ্ফল’। তিনি বলেন, ‘যে হারে আমাদের সেনারা অগ্রসর হচ্ছে, খুব শিগগির (স্বঘোষিত) লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের পুরো ভূখণ্ড স্বাধীন হবে।’

লুহানস্কে রুশসমর্থিত বাহিনীর এই প্রতিনিধি বলেন, ‘আমাদের সেনারা ইতিমধ্যে লিসিচানস্ক শহর এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। তাই বলতে পারি, আমরা ইউক্রেনীয় সেনাদের গতিবিধি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছি।’

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে বন্দরনগরী মারিউপোল দখলে নেওয়ার পর সেভেরোদোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ মস্কোর জন্য সবচেয়ে বড় বিজয়। একসময়ের লাখ মানুষের এই শহর রুশ বাহিনীর গোলাবর্ষণে এখন ধ্বংসস্তূপের পরিত্যক্ত ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

সেভেরোদোনেৎস্কের পতন পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের গতিবিধি পাল্টে দেবে। সমরশক্তির দিক থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে মস্কো। এত দিন ধীরেই সামনে অগ্রসহ হতে হয়েছিল রুশ বাহিনীকে।