শিরোনাম
ইউক্রেনের রুশ আগ্রাসন চারমাস পেরিয়ে আজ পঞ্চম মাসে গড়ালো। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল রাশিয়া। বর্তমানে দেশটির পূর্বাঞ্চলে তীব্র লড়াই হচ্ছে। এদিকে ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে আরো এক ধাপ এগিয়েছে ইউক্রেন।
বৃহস্পতিবার প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে ইউরোপীায় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ এগিয়েছে ইউক্রেন। এদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এরপর আরো কিছু ধাপ পার করলেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থায়ী সদস্য হবে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইইউ-র এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ইউক্রেন ইইউ-র কাছে কৃতজ্ঞ’। বস্তুত, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের সময় থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে সবরকমভাবে সাহায্য করেছে। একদিকে যেমন তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে লাগাতার মানবিক সাহায্যও পাঠানো হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পরেই ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ দেওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সপ্তাহখানেক আগে ইউক্রেনে গিয়ে ইইউ-র নেতারা জেলেনস্কিকে জানিয়ে এসেছিলেন, দ্রুত ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করা হবে।
২০১৩ সালের পর ফের কোনো দেশকে সদস্য করার সিদ্ধান্ত নিল ২৭ দেশের জোট ইইউ। শেষ সদস্যপদ দেওয়া হয়েছিল ক্রোয়েশিয়াকে।
যুদ্ধ পরিস্থিতি
শুক্রবার ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চার মাস পূর্ণ হয়ে পঞ্চম মাসে পড়ল। পশ্চিম ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পূর্ব ইউক্রেনে ব্যাপক লড়াই চলছে। একদিকে খারকিভে নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে, লুহানস্কের দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর সিভিয়েরোদনেৎস্ক, লিসিচ্যানস্কে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। সিভিয়েরোদনেৎস্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রাশিয়ার দখলে চলে গেছে। সেখানে একটি রাসায়নিক কারখানা থেকে এখন প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে ইউক্রেনের সেনা। ওই কারখানায় প্রায় তিনশ বেসামরিক ব্যক্তি আটকে আছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পরামর্শদাতা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ডনবাস (লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক) অঞ্চলে তীব্র লড়াই চলছে। কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। তার দাবি, ডনবাস দখল করার জন্যই নতুন করে খারকিভে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। তারা চাইছে, ডনবাস অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের সেনাদের মনোযোগ সরিয়ে আনতে। খারকিভ আক্রমণ করায় ডনবাস থেকে ইউক্রেনের সেনারা সেই দিকে যাবে বলে তাদের ধারণা।
গ্যাস নিয়ে নতুন পরিকল্পনা
রাশিয়া থেকে ৬০ শতাংশ গ্যাস নিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। নরওয়ে থেকে নেওয়া হতো ২০ শতাংশ। যুদ্ধের কারণে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি ক্রমশ কমিয়েছে ইইউ-র দেশগুলো। রাশিয়াও বেশ কিছু দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার নরওয়ের সঙ্গে ইইউ একটি চুক্তি সই করেছে। এর ফলে ইইউর দেশগুলোতে নরওয়ে অনেক বেশি গ্যাস সরবরাহ করবে। ইউরোপীয় দেশগুলোর গ্যাসের মজুত ক্রমশ কমছে। এই পরিস্থিতিতে একদিকে তাদের যেমন নরওয়ের সাহায্য প্রয়োজন তেমনই বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আলোচনায় বসেছে ইইউ-র দেশগুলো।
আমেরিকার প্রতিশ্রুতি
বৃহস্পতিবার আমেরিকা জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে আরো ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য পাঠাবে। আরো আধুনিক অস্ত্র ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা। গত সপ্তাহেই তারা ইউক্রেনকে এক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য পাঠানোর ঘোষণা করেছিল। মাঝারি পাল্লার মিসাইল তারা ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের সেনার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। যার সাহায্যে ৪০ কিলোমিটারের দূরের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা যায়। তবে ইউক্রেনকে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে যে, তারা রাশিয়ার ভেতরে আক্রমণ চালাতে পারবে না।
সূত্র: দেশ রূপান্তর