শিরোনাম
ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিরোধে অনিশ্চয়তায় পড়েছে রাজ্য সরকারের ভাগ্য। রাজ্য সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী একনাথ সিন্ধে দাবি করেছেন, তার সঙ্গে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল শিব সেনার ৪০ থেকে ৫৬ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন। তার বিদ্রোহের জেরে ক্ষমতাসীন শিব সেনার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পতনের মুখে দাঁড়িয়েছে।
তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভভ ঠাকরেসহ দলের সিনিয়র নেতারা একনাথ সিন্ধেকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সিদ্ধান্ত বদলানোর কোনও ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত দেননি তিনি।
মহারাষ্ট্রে দীর্ঘ দিনের মিত্রতার পর ২০১৯ সালের রাজ্য নির্বাচনের আগে শিব সেনা ও বিজেপির জোট ভেঙে যায়। ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েনে ভাঙে জোট। তবে নির্বাচনে রাজ্যের বিধানসভার ২৮৮ আসনের মধ্যে ১০৬ আসনে জয়লাভ করে একক বৃহত্তম দলে পরিণত হয় বিজেপি। তবে আঞ্চলিক ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি), ভারতের মূল বিরোধী দল কংগ্রেস এবং আরও কয়েকটি ছোট দল ও স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করে শিব সেনা।
জানা যাচ্ছে একনাথ সিন্ধে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে ফের শিব সেনার জোট গড়তে আগ্রহী। তাদের সঙ্গে জোট গড়ে সরকারে ফিরতে চান তিনি।
এই সপ্তাহে বিবাদ গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একনাথ সিন্ধে এবং মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভভ ঠাকরে নিজেদের অনুগত আইনপ্রণেতাদের হোটেলে আটকে রাখেন। অপরপক্ষের তাদের দলে টানা ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে জোরালো রাজনৈতিক নাটকীয়তা প্রত্যক্ষ করে রাজ্যটি।
ভারতের দলত্যাগ বিরোধী আইনের অধীনে অযোগ্যতা এড়াতে একনাথ সিন্ধেকে রাজ্যের ৩৭ আইনপ্রণেতার সমর্থন পেতে হবে। তবে তিনি দাবি করেছেন শিব সেনার ৪০ জন এবং ছয় জন স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতার সমর্থন তার রয়েছে। তবে এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
বেশ কয়েক জন সমর্থকদের নিয়ে একনাথ সিন্ধে উঠেছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিজেপি শাসিত রাজ্য আসামের একটি হোটেলে। মঙ্গলবার সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের স্বাগত জানান বিজেপির দুই নেতা।
সংকটের শুরু যেভাবে
রাজ্যে গত সোমবারের বিধানসভা উপ নির্বাচনের পর শিব সেনার প্রবীণ নেতা একনাথ সিন্ধের সঙ্গে যোগাযোগ করা অসম্ভব হয়ে পড়ার পর থেকে সংকট শুরু হয়। শিব সেনা ও তাদের মিত্ররা দশ আসনের মধ্যে ছয়টিতে জয়ের আশা করছিলেন, কিন্তু জেতেন মাত্র পাঁচটিতে। বিজেপি চারটিতে জয়ের আশা করলেও বাকি পাঁচটিতে জয় পায় তারা।
খবর আসতে থাকে একনাথ সিন্ধে শিব সেনার আরও ১১ আইনপ্রণেতাকে নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের সুরাটে রওনা দিয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী তাকে দলের হুইপের পদ থেকে বরখাস্ত করেন।
পরে নিজের টুইটার প্রোফাইল থেকে শিব সেনার পরিচয় মুছে ফেলেন একনাথ সিন্ধে। পরে তাকে সুরাটের হোটেলে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যায়।
এখন যা ঘটছে
একনাথ সিন্ধে এবং তার সমর্থকেরা মঙ্গলবার রাতে আসামের গুয়াহাটির উদ্দেশে রওনা দেন। এর কিছুক্ষণ আগে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভভ ঠাকরের ফোন পান।
একনাথ সিন্ধে দাবি করেন তিনি শিব সেনা পার্টি ভাঙছেন না আর তার সঙ্গে থাকা আইনপ্রণেতারা দলের প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শ সামনে এগিয়ে নেবেন। বালাসাহেব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভভ ঠাকরের প্রয়াত বাবা।
যা ঘটতে চলেছে
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভভ ঠাকরে। এই বৈঠকে এনসিপি নেতা শারদ পাওয়া এবং কংগ্রেস নেতা কমল নাথ উপস্থিত থাকবেন।
শিব সেনার অভ্যন্তরীণ বিরোধ উস্কে দেওয়ার জন্য দলটির সিনিয়র নেতা সঞ্জয় রাউত বিজেপিকে দায়ী করেছেন। তার অভিযোগ মহারাষ্ট্র সরকারের পতন ঘটাতে চাইছে বিজেপি।
মহারাষ্ট্রে বর্তমানে ২৮৭ আসনের বিধানসভা সচল রয়েছে। এরমধ্যে বিজেপির আইনপ্রণেতার সংখ্যা ১১৩ জন। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে এবং সরকার গঠন করতে তাদের প্রয়োজন ১৪৫ আসন।
সূত্র: বিবিসি