শিরোনাম
আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলে বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সরকার। সোমবারের এ ঘোষণার অর্থ, পার্লামেন্ট বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে পতন হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট সরকারের। এমনটি যদি হয়, তাহলে মাত্র তিন বছরের মধ্যে দেশটিতে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
কোন পরিস্থিতিতে পড়ে ইসরায়েল সরকার পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর এরপরই–বা দেশটিতে কী হতে যাচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক বিশ্লেষণে।
মাত্র এক বছর আগে ক্ষমতায় আসে ইসরায়েলের বর্তমান জোট সরকার। আট দলের এ জোটে রয়েছে ডানপন্থী, মধ্যপন্থী, এমনকি ইসরায়েলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দলও। তবে সরকার গঠনের শুরু থেকেই এ জোটের অবস্থা ছিল নড়বড়ে।
ইসরায়েলে দুই বছর ধরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে গত বছরের জুনে এই জোট গঠন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ। বেনেট-লাপিদ জোট ক্ষমতায় বসায় দীর্ঘ ১২ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর গদি ছাড়তে হয় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর।
জোট সরকারের দলগুলোর একতাবদ্ধ হওয়ার পেছনে মূল কারণ ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের বিরোধিতা। তবে শেষ পর্যন্ত নেতানিয়াহুবিরোধী মনোভাব তাদের আর এক ছাতার নিচে রাখতে পারল না।
সাম্প্রতিক সময়ে জোটের দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ চরমে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে জোট ভেঙে যেতে পারে বলে কয়েক সপ্তাহ ধরেই গুঞ্জন চলছিল।
যে পথে হেঁটে বর্তমান অবস্থায় ক্ষমতাসীন জোট
পার্লামেন্টে খুবই কম ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় বসেছিল বেনেট-লাপিদ জোট। এ ছাড়া রাষ্ট্র, ধর্ম, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারির মতো মৌলিক কিছু বিষয়ে জোট সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। এসবের মধ্যে মূল ভাঙনটা শুরু হয় কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্য জোট ত্যাগ করলে।
গত এপ্রিলে বেনেটের ডানপন্থী ইয়ামিনা পার্টির সদস্য ইদিত সিলমান দলত্যাগ করেন। ফলে ইসরায়েলের ১২০ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় ক্ষমতাসীন জোট। গত কয়েক সপ্তাহেও বেশ কয়েকজনের জোটত্যাগ ও বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে পার্লামেন্টে আইন পাসের ক্ষমতা হারিয়েছে বেনেট সরকার। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন আগেই উঠেছিল।
এদিকে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলা এবং দখল করা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের প্রতিবাদে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় ইউনাইটেড আরব লিস্ট। সম্প্রতি বেঁকে বসেন ইয়ামিনা পার্টির এক সদস্যও। পার্লামেন্টে সরকারি জোটের পক্ষে ভোট দেবেন না বলে চলতি মাসের শুরুর দিকে জানান তিনি।
জোট সরকারের ওপর বড় ধাক্কাটা আসে দুই সপ্তাহ আগে। পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের অধিকার নিয়ে করা একটি আইনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পার্লামেন্টে বিল উত্থাপন করা হয়। তবে ওই বিল পাস হয়নি। ইসরায়েলে এটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ, দেশটির পার্লামেন্টে বড় সমর্থন পেয়ে আসছে আইনটি। ৫০ বছর ধরেই তা বারবার নবায়ন করা হয়েছে।
এবার আইনের মেয়াদ বাড়ানোর বিল পাস না হওয়ার পেছনে রয়েছে সরকার ও বিরোধীপক্ষের সম্পর্কে দিন দিন বাড়তে থাকা তিক্ততা। সরকারকে আরও নড়বড়ে করতে এককালে সমর্থন দিয়ে আসা ওই আইনের বিপক্ষে পার্লামেন্টে ভোট দেয় বিরোধীরা।
সামনে কী হবে
ইসরায়েলের পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে আগাম নির্বাচনের আয়োজন করতে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে একটি খসড়া প্রস্তাব তোলা হবে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে নাফতালি বেনেট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন নির্বাচনের আগপর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাল ধরতে পারেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ।
তবে নতুন নির্বাচনের পথে না হেঁটে পার্লামেন্ট সদস্যদের বিকল্প সরকার গঠনের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের অনেকে। পার্লামেন্টে সরকার ও বিরোধীপক্ষে থাকা ডানপন্থী দলগুলো জোট গড়লে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তারা। এতে করে নতুন ডানপন্থী জোট সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি হবে।
এদিকে নতুন নির্বাচন হলে তা পার্লামেন্ট বিলুপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে করতে হবে।আগামী ২৫ অক্টোবর নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন ধরা হচ্ছে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে খুলে যেতে পারে নেতানিয়াহুর জন্য আবার ক্ষমতায় আসার পথ। তিনিই যে আবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন—ইতিমধ্যে এমন ঘোষণাও দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
জনমত জরিপ থেকে পাওয়া হিসাব-নিকাশও অনেকটা এমনই। এই হিসাব অনুযায়ী, পার্লামেন্ট বিলুপ্ত হলে নেতানিয়াহুর দল ‘লিকুদ’ আবারও ইসরায়েলে এককভাবে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হবে। তবে সরকার গঠনে নেতানিয়াহু আইনপ্রণেতাদের বেশির ভাগের সমর্থন পাবেন কি না, তা অবশ্য পরিষ্কার নয়।