প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীর সমান ভর গ্রাস করছে যে ব্ল্যাকহোল!

ফানাম নিউজ
  ১৯ জুন ২০২২, ১২:০১

মহাবিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। নতুন আবিষ্কৃত এই ব্ল্যাকহোলটি এতই দ্রুত বর্ধনশীল যে, এটি প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীর সমান ভর গ্রাস করছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। জে-১১৪৪ নামের এই ব্ল্যাকহোলটি আবিষ্কার করেছেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। 

এএনইউ'র বিজ্ঞানীদের মতে, জে-১১৪৪ গত ৯০০ কোটি বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল এবং এর ভর ৩০০ কোটি সূর্যের ভরের সমান।

গবেষক দলের আরেক সদস্য এএনইউ’র পিএইচডি গবেষক স্যামুয়েল লাই বলেন, এটি আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সির ব্ল্যাকহোলের চেয়ে ৫০০ গুণ বড়।

এত বড় আকারের ব্ল্যাকহোলটি বিজ্ঞানীদের এ বিষয়ে আরও কৌতূহলী করে তুলেছে। কারণ প্রায় ১০০ কোটি বছর আগে, তুলনামূলক এই আকারের অন্য ব্ল্যাকহোলগুলোর এমন দ্রুত হারে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।

গবেষক দলের প্রধান ড. ক্রিস্টোফার ওনকেন এবং ওই দলের আরেক সদস্য এএনইউ’র সহকারী অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান ওলফের মতে, ব্ল্যাকহোলটির চারপাশে একটি গ্যাস বলয় বা কোয়াসার রয়েছে। এটি আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের সমস্ত আলোর চেয়ে সাত হাজার গুণ বেশি উজ্জ্বল। আর এই উজ্জ্বলতাই এটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে দৃশ্যমান করে তুলেছে।

ওনকেন এবং ওলফ দুজনই এই ব্ল্যাকহোলটিকে ‘খড়ের গাদায় সুঁই খুঁজে পাওয়ার’ মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন।

ওনকেনের মতে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এমন একটি ব্ল্যাকহোলের সন্ধান করছেন। এর আগে বিজ্ঞানীরা যেসব ব্ল্যাকহোলের সন্ধান পেয়েছেন সেগুলো খুবই অনুজ্জ্বল ছিল। কিন্তু তারা এই উজ্জ্বল ব্ল্যাকহোলটিকে পাশ কাটিয়ে গেছেন এবং এটি খুবই আশ্চর্যজনক।

ওনকেন আরও বলেন, এখন আমরা এই ব্ল্যাকহোলের আলাদা বৈশিষ্ট্যের কারণ খুঁজছি। আমাদের ধারণা বিপর্যয়কর কিছু একটা ঘটেছে। সম্ভবত দুটি বড় গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ বিধ্বস্ত হয়ে একে অপরের সঙ্গে একীভূত হওয়ার ফলে এই বৃহৎ আকারের ব্ল্যাকহোলটির সৃষ্টি হয়েছে।

‘আর গ্যালাক্সিদ্বয়ের বিস্ফোরণের ফলে ব্ল্যাকহোলের ওপর প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন উপাদান ছড়িয়ে পড়েছিল, যেগুলো পরে এটি গ্রাস করে নেয়।’

যেসব নক্ষত্রের ভর অনেক বেশি, জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার পর অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে নিজেদের ওপরই চুপসে যায় সেগুলো। আর তখনই ওইসব নক্ষত্র ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়। সাধারণত ব্ল্যাকহোলের ঘনত্ব হয় অনেক অনেক বেশি। এর ফলে আকারের তুলনায় এদের ভর হয় অবিশ্বাস্য!

ক্রিশ্চিয়ান ওলফের মতে, এই ব্ল্যাকহোলটি এমন একটি আউটলায়ার (প্রধান অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র অংশ) যা হয়তো ভবিষ্যতে আর পাওয়া যাবে না।

সদ্য খুঁজে পাওয়া এই ব্ল্যাকহোলটি খুব অন্ধকার বাড়ির উঠোনে বসে একটি ভালো টেলিস্কোপের সাহায্যে যেকেউ সহজেই দেখতে পারবে। কারণ হোলটির ভিজ্যুয়াল ম্যাগনিটিউড (পৃথিবীর একজন পর্যবেক্ষকের কাছে মহাকাশের কোনো বস্তু কতটা উজ্জ্বল তা খুঁজে বের করার পরিমাপ) ১৪ দশমিক ৫।