যে কারণে সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে মরিয়া বাইডেন

ফানাম নিউজ
  ১৮ জুন ২০২২, ১৭:১৭

২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জো বাইডেন জোর দিয়ে বলেছিলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাসের কারণে সৌদি আরবকে একঘরে করা উচিৎ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার সময় বাইডেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি সৌদি আরবকে এর মূল্য চুকাতে বাধ্য করবেন এবং দেশটিকে একঘরে করে ছাড়বেন।

২০২০ সালের শেষদিকে নির্বাচনে জয়লাভ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও মানবাধিকার বিষয়ে সৌদি আরবের রেকর্ড, ইয়েমেন যুদ্ধ এবং সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় সৌদি সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে এসেছিলেন বাইডেন।

নির্বাচনে জেতার পর তিনি খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনও প্রকাশ করেন এবং এতে জড়িত কয়েকজনের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দেন। তবে যুবরাজ সালমানের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

কিন্তু এখন হঠাৎ করেই তার চিন্তাধারায় নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে এখন উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি। আগামী জুলাই মাসে ইসরায়েল-পশ্চিম তীরের পাশাপাশি সৌদি আরব সফরেও যাবেন তিনি এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) সঙ্গে দেখা করবেন। বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর সৌদি যুবরাজের সঙ্গে এবারই প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ করবেন।

জ্বালানি তেলের ক্রমবর্ধমান দাম এবং বৈশ্বিকভাবে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনাই সৌদি আরব নিয়ে বাইডেনের অবস্থানে বদল এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ইলিনয়ের ডিক ডারবিন বলেছেন, তেলের দাম ও মার্কিন জনগণের ওপর চাপ কমাতে সৌদি আরবের সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা তিনি বুঝতে পারছেন। তবে সৌদির মানবাধিকার রেকর্ডের বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এ রাজনীতিবিদ।

বাইডেনের সৌদি সফরের খবরে অনেকের মনেই ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারিকে এ বিষয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা সম্পর্ক পুনর্গঠনের সময় তা ছিন্ন করতে চাই না। তবে মানবাধিকার এমন একটি ইস্যু, যা প্রেসিডেন্ট অনেক নেতার সামনেই তুলে ধরেন।

বাইডেনের সৌদি আরব সফরের খবর প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির বাগদত্তা। তিনি বলেন, সৌদি যুবরাজ সালমানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখা করার সিদ্ধান্ত আমাকে এবং সারা বিশ্বের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের সমর্থকদের মারাত্মকভাবে হতাশ করেছে। বাইডেন এমবিএসের সঙ্গে দেখা করলে নৈতিকতা হারিয়ে ফেলবেন এবং আমার শোক ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলবেন।

যুবরাজ সালমানের সঙ্গে বাইডেনের সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্তকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে অভিহিত করেছেন সৌদি আরবের এক মানবাধিকারকর্মী।

বাইডেনের সিদ্ধান্তে বিচলিত আরেকটি দল হলো ‘৯/১১ ফ্যামিলিজ ইউনাইটেড’। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করে এটি। রিয়াদে যুবরাজ সালমান বা অন্য নেতাদের সঙ্গে দেখা হলে ৯/১১ হামলায় সৌদি আরবের ভূমিকা তুলে ধরতে বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেনের সৌদি সফর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, নীতিগত ক্ষোভের চেয়ে শেষপর্যন্ত বাস্তব রাজনীতিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মূল কথা হলো, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। আগামী নভেম্বরে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচনের মুখোমুখি হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ অবস্থায় জ্বালানির চড়া দাম অবশ্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না। তাই তিনি মরিয়া হয়ে রুশ তেলের বিকল্প খোঁজ করছেন।

অবশ্য ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই সৌদি আরবের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ শুরু করেছিল বাইডেন প্রশাসন। এক্ষেত্রে মূল আলোচনা ছিল আট বছর ধরে চলা ইয়েমেন যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব বহু পুরোনো মিত্র। তবে ২০১৮ সালে সৌদি সরকারের সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরে। মার্কিন গোয়েন্দোরা এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে, যুবরাজ সালমানই খাশোগিকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকারীরা ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর এ সাংবাদিকের দেহ টুকরো টুকরো করে।