গবাদিপশুর ঢেকুরের জন্য কর

ফানাম নিউজ
  ১০ জুন ২০২২, ০৮:৪৪

গরুসহ অন্যান্য গবাদিপশু জাবর কাটে। এ সময় প্রাণীদের পেট থেকে বের হয় মিথেন গ্যাস। তাই পরিবেশ রক্ষায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঠেকাতে গবাদিপশুর জাবর কাটার ওপর কর আরোপের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির মিথেন গ্যাস নির্গমনের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে এসব গবাদিপশু। পরিকল্পনাটি কার্যকর হলে মিথেন নির্গমন ঠেকাতে এ রকম কর আরোপ করা প্রথম দেশ হবে নিউজিল্যান্ড। 

বিবিসির খবরে বলা হয়, ৫০ লাখ মানুষের দেশটিতে ১ কোটির বেশি গরু ও ২ কোটি ৬০ লাখের বেশি ভেড়া রয়েছে। দেশটিতে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস, বিশেষত মিথেন নির্গত হয়, তার অর্ধেকই কৃষি খাত থেকে উৎপন্ন হয়। এর আগে দেশটিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রকল্পে কৃষি খাতকে যুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে সরকারের সমালোচনা করছিলেন পরিবেশবিদেরা। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাচ্ছিলেন তাঁরা।

নিউজিল্যান্ডের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী জেমস শ বলেছেন, ‘বায়ুমণ্ডলে আমরা যে পরিমাণ মিথেন গ্যাস ছড়াচ্ছি, তা আমাদের কমানো প্রয়োজন। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনে কৃষিক্ষেত্রের জন্য কার্যকর গ্যাস নির্গমন কর ব্যবস্থা আরোপ ভূমিকা রাখবে।’

নিউজিল্যান্ড সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী, মিথেন গ্যাস নির্গমনের জন্য কৃষকদের ২০২৫ সাল থেকে কর দিতে হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যাঁরা মিথেন কমাবেন, তাঁদের জন্য বিশেষ প্রণোদনারও ব্যবস্থা থাকবে। মিথেন কমানোর জন্য গবাদিপশুকে বিশেষ খাবার দেওয়া, জমিতে গাছ লাগানোসহ নানা বিষয় বিবেচনা করা হবে।

এদিকে এই প্রকল্পে সরকারে সহযোগিতার কথা বলেছেন দুগ্ধ খামারি ও ফেডারেটেড ফারমার্স অব নিউজিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু হগার্ড। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর ধরে আমরা সরকার ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করছি, যাতে নিউজিল্যান্ডে খামারগুলো বন্ধ না হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ রকম বিষয়ের সঙ্গে অনেক পক্ষ জড়িত থাকে। তাই কিছু বিষয় আমাদের অস্বস্তির জন্ম দেবে।’

কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ গবেষণা, উন্নয়ন ও কৃষকদের পরামর্শ খাতে ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটির পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত মাসে নিউজিল্যান্ডের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জলবায়ু পরিবর্তন সামাল দিতে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

গত বছর গ্লাসগোতে কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৩০ শতাংশ মিথেন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশ ওই উদ্যোগে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

বিশ্বের ৪০ শতাংশের বেশি মিথেন জলাভূমির মতো প্রাকৃতিক উৎস থেকে উৎপন্ন হয়। তবে এখন সবচেয়ে বেশি মিথেন সৃষ্টি হয় মানুষের নানাবিধ কর্মকাণ্ড থেকে। এর মধ্যে রয়েছে গবাদিপশু পালন, ধান উৎপাদনের মতো কৃষিকাজ ও আবর্জনার ভাগাড় থেকে। ২০১৯ সালে বায়ুমণ্ডলে মিথেন রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছায়, যা প্রাক্-শিল্প যুগের থেকে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। বিজ্ঞানীদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীকে উত্তপ্ত করার ক্ষেত্রে মিথেন ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।