শিরোনাম
মহানবি হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন ভারতে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নূপুর শর্মা। ওই মন্তব্যের জেরে মুসলিম বিশ্বের রোষের মধ্যে পড়েছে দেশটি। যা ভারতের জন্য কূটনৈতিক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
প্রায় ১০ দিন আগে এক টেলিভিশনের বিতর্ক অনুষ্ঠানে মহানবি (স.)-কে নিয়ে নূপুর শর্মার অবমাননাকর মন্তব্য ভারতে এবং ভারতের বাইরে ১২টির বেশি মুসলিম দেশের মুসলমানদের চরম ক্ষুব্ধ করেছে।
রোববার (৫ জুন) বিজেপি নূপুর শর্মাকে দল থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। তার টিভি অনুষ্ঠানে করা ওই আপত্তিকর মন্তব্যের স্ক্রিনশট টুইটারে শেয়ার করার জন্য দলটি দিল্লিতে তাদের মিডিয়া শাখার প্রধান নাভিন কুমার জিন্দালকেও বহিষ্কার করেছে।
এক বিবৃতিতে বিজেপি জানায়, তাদের দল 'কোনো সম্প্রদায় বা ধর্মকে হেয় করে বা অপমান করে এমন কোনো আদর্শের বিরুদ্ধে' এবং তারা আরও বলেছে যে তারা 'এ ধরনের দর্শন বা ব্যক্তিকে সমর্থনও করে না।'
মুসলিম দেশগুলোর ক্ষোভ প্রশমন করার চেষ্টায় ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, এসব মন্তব্য সরকারের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না এবং এগুলো পার্টির 'ভেতরকার কোনো ব্যক্তির মতামত নয়।'
কিন্তু অনেকেই যেটা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন সেটা হলো- নূপুর শর্মা পার্টির 'বাইরের কেউ' নন, তিনি রীতিমতো দলের ভেতরকার গুরুত্বপূর্ণ একটা কণ্ঠ।
কে এই নূপুর শর্মা?
দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার হওয়ার আগে পর্যন্ত ৩৭ বছর বয়সী এই আইনজীবী ছিলেন 'বিজেপির সরকারি মুখপাত্র'। তিনি ছিলেন দলের উঠতি এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন মুখপাত্র, যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে এবং সরকারের পক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার জন্য রাতের পর রাত টেলিভিশনের বিতর্ক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন।
২০০৮ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময় নূপুর শর্মা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। তখন তিনি হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) আন্দোলনের ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
লন্ডনের স্কুল অব ইকনমিকস থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি পাশ করে ২০১১ সালে ভারতে ফেরার পর রাজনীতির জগতে নূপুর শর্মার দ্রুত উত্থান হতে থাকে।
সুবক্তা এবং রূঢ়ভাষী নূপুর শর্মা ইংরেজি এবং হিন্দি দুই ভাষাতেই দক্ষতা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে তার মতামতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিজেপির কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপির মিডিয়া কমিটিতে তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়।
এর দু'বছর পরে যখন নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তখন তিনি ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিপক্ষে বিজেপির প্রার্থী।
কেউ আশা করেনি ওই নির্বাচনে তিনি কেজরিওয়ালকে হারিয়ে দেবেন। তবে ওই নির্বাচনের জন্য তার ব্যাপক উদ্দীপনামূলক প্রচারাভিযান তাকে দলে আরও সামনের সারিতে নিয়ে আসে।
তিনি দিল্লিতে দলের সরকারি মুখপাত্র নিযুক্ত হন এবং ২০২০ সালে তাকে বিজেপির 'জাতীয় মুখপাত্র' করা হয়।
বরখাস্ত হওয়ার পর এক বিবৃতিতে নূপুর শর্মা লেখেন, তিনি 'নিঃশর্তভাবে' তার মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তবে তিনি ওই মন্তব্য করার পেছনে একটা যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন, ওই অনুষ্ঠানে 'হিন্দুদের দেবতা শিবকে অনবরত যেভাবে অপমান আর অসম্মান করা হচ্ছিল, তার জবাব দিতে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন।'
সূত্র : বিবিসি