মন ভেঙে গেছে স্বপ্ন দেখার শক্তিও নেই ইউক্রেনের

ফানাম নিউজ
  ০৭ জুন ২০২২, ১২:১৯

ইউক্রেনের যুদ্ধ তিন মাস অতিক্রম করছে। বদলে গেছে ইউক্রেনীয়দের স্বাভাবিক জীবন। বিভীষিকাময় এ দিনগুলোতে স্বপ্ন দেখার ইচ্ছেশক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন বাসিন্দারা।

যদিও মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে অভিযোজনকারী প্রাণী। কিন্তু প্রতিনিয়তই যেখানে মৃত্যুর ভয়, বিকট বিস্ফোরণের শব্দ-সেখানে স্বপ্ন বাঁচে কতক্ষণ?

প্রতিদিনই নতুন নতুন দুঃসংবাদ দেয় সংবাদপত্রগুলে! নিহতের পরিসংখ্যান, নেই কোনো বিনোদন। আর কত? খাপ খাইয়ে নেওয়াটাও খুব কঠিন হয়ে পড়ছে দিন দিন! ইউক্রেনীয়দের পরিবর্তিত সেই জীবনব্যবস্থায় ফুটে উঠেছে আলজাজিরার প্রতিবেদনে।

আমরা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করি কিন্তু পারি না : ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসছে ইউক্রেনের পশ্চিম শহরগুলোতে।

কিন্তু অধিকাংশ বাসিন্দাদের জন্য যুদ্ধ তাদের জীবনে বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আমরা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করি কিন্তু পারি না। আসামি তেরেজিমা (২২) কিয়েভ ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার একজন সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

তিনি জাপানের নাগরিক হলেও ২০১০ সাল থেকে কিয়েভে বসবাস করছেন। যুদ্ধদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে তেরিজিমা বলেন, ‘আমরা স্বভাবিক নেই। আমরা সব কিছু উৎসর্গ করে দিয়েছি। বর্তমানে যেখানে কাজ করছি সেই দায়িত্ব পালনে আমি সব ছাড়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখি সবসময়। শুরুতে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতাম কিন্তু বর্তমানে মনোযোগ দেওয়া আমার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্রে হামলা করছে, গুলি করছে, কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করা যাচ্ছে না। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে শুরুর দিকে জিম করতাম দৌড়াদৌড়ি করতাম।

এখন সেটাও আর হয় না। একদিনের ঘটনা-হাঁটতে বেড় হব হঠাৎ একটি ক্ষেপণাস্ত্র আমার সামনের বাড়িটিতে এসে আঘাত হানে! আমি আঘাত এবং বিস্ফোরণ উভয়ই দেখেছি-এটা আমার জন্য বিস্মরণীয় ছিল। আজকাল শক্তি-ক্ষয় উভয়ই অনুভব করি। আমি মনে করি এটি আমার ওপর যুদ্ধের ভার পড়েছে।’

পরকে আপন করেছে আপন হয়েছে পর : ওগলা সার্ডিউক (৩৭)। ওলেনা পিনচুক ফাউন্ডেশনের একজন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর। এটি কিয়েভের এইচআইভি ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণে একটি ব্যক্তিগত অর্থায়নের দাতব্য সংস্থা।

তিনি বলেন, আমাদের জীবনের সবকিছুতে পরিবর্তন এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে মানুষের মাঝে মানুষের যোগাযোগ। আপনি বুঝতে পারবেন কে আপনার আপন মানুষ, কে নয়।

অনেক আপনজন প্রিয়জন জীবনের তাগিদে চলে গেছেন জীবন বাঁচাতে। অনেকেই রয়ে গেছেন পাশে। আবার পাশে থাকা অনেক অপরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে অতি প্রিয়। আমার জীবনের আমূল পরিবর্তন এসেছে। যুদ্ধের আগে যাদের আমি আপন ভাবতাম, আদতে তারা এখন আমার থেকে অনেক দূরে।