যে কারণে রুশ সাংবাদিককে নাগরিকত্ব দিল ইউক্রেন

ফানাম নিউজ
  ০৪ জুন ২০২২, ১০:৫৫

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের বিরোধিতা করায় বিখ্যাত রুশ সাংবাদিক আলেক্সান্ডার নেভজোরভকে নাগরিকত্ব দিয়েছে ইউক্রেন।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা আন্তন গেরাশচেঙ্কো জানিয়েছেন, ইউক্রেন আলেক্সান্ডার নেভজোরভ ও তার স্ত্রীর নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণ করেছে।

নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নেভজোরভ বলেন, যুদ্ধ একটা অপরাধ, ইউক্রেন এই যুদ্ধের ভিক্টিম।

এর আগে ইউক্রেনে রুশ অভিযানের নিন্দা জানিয়ে তিনি স্ত্রীসহ রাশিয়া থেকে পালিয়েছিলেন।

এদিকে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সেনা অভিযানের’ বিষয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে নেভজোরভের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে রাশিয়ার একটি আদালত। 

ইতিমধ্যে ইউক্রেনে চলমান রুশ সামরিক অভিযানের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই মস্কো এই অভিযান চালিয়েছে।

তবে ইউক্রেনের দাবি, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে।

যে কারণে ইউক্রেনে হামলা

রাশিয়া চায়, ইউক্রেন ন্যাটো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য না হোক। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাবি, ইউক্রেন পশ্চিমাদের হাতের পুতুল। ইউক্রেনকে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবেও মানতে নারাজ পুতিন। তবে এই সংকট শুরু অনেক আগে থেকেই।

চলমান এই সংকটের সূত্রপাত ২০১৪ সালে। তবে এই সংকটের মূলে যেতে ফিরে তাকাতে হবে সোভিয়েত আমলে। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল ইউক্রেন।

ইউক্রেনে দুটি রাজনৈতিক ধারা প্রবল। একটি ধারা পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চায়। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেওয়ার পাশাপাশি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে আগ্রহী। অন্য ধারাটি রুশপন্থী। তারা রাশিয়ার বলয়ে থাকতে চায়।

ইউক্রেনের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ রুশভাষী। তারা জাতিগত ভাবেও রুশ। রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক-সামাজিক ঘনিষ্ঠতা আছে।

ইয়ানুকোভিচ ইইউর সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। তখন পুতিন চাপ বাড়ান। চাপে পড়ে ইয়ানুকোভিচ ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসেন। ফলে ইউক্রেনে তার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হয়।

ইয়ানুকোভিচের পর যারা ইউক্রেনের ক্ষমতায় আসেন, তারা ইইউপন্থী বলে পরিচিত। তাদের নানা পদক্ষেপে পুতিন ক্ষুব্ধ হন।

ইয়ানুকোভিচের পতনের পর পূর্ব ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয় রাশিয়া।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৯ সালে উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট (ন্যাটো) প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় এই জোট গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের (ইউএসএসআর) আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মিত্ররা বৃহত্তর রাজনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে ন্যাটোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।

ইউক্রেন ধারাবাহিকভাবে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। এমনকি, এই আগ্রহের কথা তাদের সংবিধানেও উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর রাশিয়া দেশটিতে সামরিক অভিযান চালায়।

সূত্র: আলজাজিরা