শিরোনাম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মাদ্রাসা থেকে এবার প্রথম হয়েছে একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতার মেয়ে।
আনন্দ করার দিনেও আনন্দ নেই সরিফা খাতুনের বাড়িতে। ঝালমুড়ি বিক্রেতার মেয়ে প্রথম হলেও টানাটানির সংসারে উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তা যে আনন্দকে চাপা দিচ্ছে।
লকডাউনে যখন স্কুল বন্ধ ছিল, পরীক্ষা হবে না বলে রব উঠেছিল, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তখন বাবাই উৎসাহ দিতেন।
বাবা উজির আলির জন্যই হাই মাদ্রাসার পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে সরিফা, রাজ্যে প্রথম হওয়ার খবর পেয়ে এমনটিই জানালেন মালদহের ছাত্রী সরিফা খাতুন।
পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৮৬। মেয়ের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সরিফার বাবা ও মা। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে তারা বুঝতে পারছেন না, এবার কী করে পড়াশোনা চলবে।
নিত্য অভাব যাতে ভবিষ্যতে তার পড়াশোনায় বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে জন্য রেজাল্ট হাতে পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদনও করেছে সরিফা।
মালদহের রতুয়া থানার বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসা থেকে এবার পরীক্ষা দিয়েছে সরিফা। কিন্তু ছোট থেকে পড়াশোনা করেছে ভাদো আবাসিক স্কুলে।
সরিফা বলেছে, ‘আমি জানতাম, এক থেকে দশের মধ্যে থাকব। শিক্ষকরাও বলতেন, আমি ভালো ফল করব। কিন্তু প্রথম হব ভাবতে পারিনি। খবর পাওয়ার পর এখন দারুণ লাগছে।’
সরিফা বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়। কিন্তু অভাবের সংসারে এই স্বপ্নপূরণ কত দূর সম্ভব, তা ভেবে নিজেও চিন্তিত সরিফা।
পাড়ায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন সরিফার বাবা উজির। ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা রোজগার, তাতে কোনোমতে চলে সরিফাদের সংসার। তবে যতই টানাটানি থাকুক, মেয়ের পড়াশোনায় কোনো খামতি রাখেননি উজির।
বাবাই তাকে সর্বক্ষণ উৎসাহ দিয়ে গেছে বলেই জানায় সরিফা। তার কথায়, ‘আমার আব্বু অত শিক্ষিত নন। বাড়ির পাশে একটা দোকান খুলে এখন ঝালমুড়ি বিক্রি করে। কিন্তু আমার পড়াশোনায় কোনো বাধা আসতে দেননি। সবসময় আমায় উৎসাহ দিয়েছে। লকডাউনের সময় সবাই বলতেন, পরীক্ষা হবে না। তখন আব্বুই সবসময় আমায় পড়তে বসতে বলত।’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা