শিরোনাম
ইরান শুক্রবার উপসাগরে দুটি গ্রিক ট্যাংকার আটক করেছে। বৃহস্পতিবার গ্রিক উপকূলে আটকে রাখা একটি ট্যাংকার থেকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরানের তেল বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে এথেন্সের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেবে বলে সতর্ক করেছিল তেহরান। দিন গড়াতেই এ ঘটনা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বলেছে, বিপ্লবী গার্ডস নৌবাহিনী আজ উপসাগরীয় জলসীমা লঙ্ঘনের জন্য দুটি গ্রিক ট্যাংকার আটক করেছে।
তবে বিস্তারিত কোনো বিবরণ দেওয়া হয়নি এবং গ্রিক ট্যাংকার দুটির বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে তাও বলা হয়নি।
গ্রিসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানি নৌবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার গ্রিক-পতাকাবাহী জাহাজ ডেলটা পোসেইডনে অবতরণ করেছে, যেটি ইরানের উপকূল থেকে ২২ নটিক্যাল মাইল দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল। তাদের ক্রুদের জিম্মি করা হয়েছে, এদের মধ্যে দুই গ্রিক নাগরিক রয়েছে।
তারা বলেছে যে একই ধরনের ঘটনা ইরানের কাছে আরেকটি গ্রিক-পতাকাবাহী জাহাজে ঘটেছে, জাহাজের নাম না জানিয়ে বলা হয়েছে, উভয় ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। গ্রিস তার মিত্রদের অবহিত করেছে, পাশাপাশি এথেন্সে ইরানের রাষ্ট্রদূতের কাছে অভিযোগ জানানো হয়।
এর আগে গ্রিসের উপকূলে একটি ট্যাংকার থেকে বৃহস্পতিবার ইরানের ৬ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল জব্দ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই তেল এখন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
পেগাস নামের তেলের ট্যাংকারটি ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার অধীনে আটক করা হয়। ট্যাংকারটি রাশিয়ার মালিকানাধীন এবং এটি ইরানের তেল বহন করছিল।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের দুই দিন আগে রুশ ব্যাংক প্রমসভিয়াজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সময় যে পাঁচটি জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল পেগাস তাদের একটি। প্রমসভিয়াজ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাংক। ওই নিষেধাজ্ঞার পর গত ১ মার্চ ট্যাংকারটির নাম পরিবর্তন করে ‘লানা’ রাখা হয় এবং ১ মে থেকে এতে ইরানের পতাকা ওড়ানো হয়।
জাহাজটিতে ১৯ জন রাশিয়ান নাবিক ছিলেন। গত মাসে দক্ষিণ গ্রিক দ্বীপ ইভিয়া উপকূলে গ্রিক কর্তৃপক্ষ প্রথমে জাহাজটি আটক করেছিল।
গ্রিস বলেছে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য রাশিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে জাহাজটি আটক করা হয়েছিল। তবে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে রাশিয়ান-সমর্থিত তেল চোরাচালান এবং ইরানের কুদস ফোর্সের জন্য পরিচালিত মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্কের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে তেলের ট্যাংকারটি আবার জব্দ করা হয়। আল কুদস হল ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বৈদেশিক অপারেশন ইউনিট।
ইরানের পোর্টস অ্যান্ড মেরিটাইম অর্গানাইজেশন বলেছে, ট্যাংকারটি প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে গ্রিসের উপকূলে আশ্রয় চেয়েছিল এবং এর মালামাল জব্দ করা ‘জলদস্যুতার একটি স্পষ্ট উদাহরণ’।
এর আগে ২০২০ সালে ভেনেজুয়েলা যাওয়ার সময় ইরানি জ্বালানির চারটি কার্গো জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনার পুনরুজ্জীবনের আশার মধ্যে ইরানি তেলের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ রাখা হয়। যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা হলো, তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার চুক্তি।
তবে, সম্প্রতি চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে আলোচনা স্থগিত হয়ে গেছে। এবং নতুন করে এই তেলের কার্গো জব্দ করার ঘটনায় ইঙ্গিত মেলে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করছে।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা