২০৫০ সালে আমরা যা খেতে পারি

ফানাম নিউজ
  ২৩ মে ২০২২, ১০:৫৬

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে ভবিষ্যতে বিশ্ব তীব্র খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হতে পারে বলে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা মহামারির মধ্যে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। ফলে বিশ্ব এখন এক অভূতপূর্ব খাদ্যসংকটের মুখোমুখি। এই সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলছে। সামনের মাসগুলোতে বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতির আর অবনতি ঘটতে পারে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে।এমনকি বিশ্ব দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভিক্ষের মুখেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকটের এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ আমাদের মেন্যুতে থাকতে পারে—এমন স্বল্প পরিচিত উদ্ভিদের তালিকা তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবিষ্যতে আমরা মিছেকলা দিয়ে সকালের নাশতা সারতে পারি। আর হালকা জলখাবারে রাখতে পারি পান্ডানাস গাছের ফল।

বিশ্বজুড়ে আমদানি-রপ্তানি হয় এমন গুটিকয়েক ফসল বা খাদ্যপণ্যের ওপর নির্ভর করে চলার যে বিপদ, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তা আমরা নতুন করে টের পাচ্ছি।

বিশ্বের শীর্ষ গম উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি ইউক্রেন। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বন্দর থেকে গম রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য খাদ্যশস্যের পাশাপাশি দেশটির সূর্যমুখী তেল রপ্তানিও এখন বন্ধ। এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে।

মাত্র ১৫টি ফসল থেকে আমাদের ৯০ শতাংশ ক্যালরি আসে। কোনো কারণে এই ফসলের সংকট দেখা দিলে তার প্রভাব আমাদের খাদ্যনিরাপত্তায় পড়াটাই স্বাভাবিক। সম্ভাব্য এই বিপদ এড়াতে খাদ্যের নতুন উৎস অনুসন্ধান জরুরি।

আমাদের খাদ্যের ভবিষ্যৎ কী, তা অনুসন্ধানে কাজ করছেন লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনসের বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যের ক্ষতির ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়ছে। ফসলহানির মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। ফলে বিশ্বজুড়ে প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম দ্রুত বাড়ছে।

লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনসের গবেষক স্যাম পিরিনন বলেন, ‘আমরা যেসব খাবার খাই, তার বৈচিত্র্যকরণের বিষয়টি ক্ষুধা দূর, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি মোকাবিলা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করার অন্যতম উপায়।’

এ প্রসঙ্গে স্যাম পিরিনন আরও বলেন, ‘আমরা জানি, বিশ্বজুড়ে হাজারো ভোজ্য উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠী এগুলো খায়। এখানেই আমরা ভবিষ্যতের এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের জন্য কোনো সমাধান খুঁজে পেতে পারি।’

বিশ্বব্যাপী ৭ হাজারের বেশি ভোজ্য উদ্ভিদের মধ্যে মাত্র ৪১৭টি ব্যাপকভাবে জন্মায়। এই উদ্ভিদগুলো খাদ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়।

পান্ডানাস

পান্ডানাস বা পান্ডানাস টেকটেরিয়াস একটি ছোট গাছ। এই গাছ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় জন্মে।

পান্ডানাস গাছের পাতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় খাবারে ব্যবহৃত হয়। এই গাছের ফল দেখতে আনারসের মতো। এই ফল কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়।

লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনসের রিসার্চ ফেলো মেরিবেল সোটো গোমেজ বলেন, গাছটি খরা, প্রবল বাতাস ও লবণাক্ততার মতো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সহ্য করতে পারে।পান্ডানাস সম্পর্কে মেরিবেল বলেন, এটি একটি জলবায়ু সহনীয় গাছ। এটি খাবার হিসেবে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।

মেরিবেল বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিশ্বজুড়ে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে এই গাছ জন্মাতে পারে।

আমাদের খাদ্যতালিকায় এই গাছ দারুণ বৈচিত্র্য আনতে পারে বলে মনে করেন মেরিবেল। তাঁর মতে, যদি পান্ডানাসকে টেকসইভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে আমাদের তা আরও ব্যাপকভাবে চাষ করা উচিত।

ভোজ্য বীজ

ভোজ্য বীজ আমাদের অন্যতম ভবিষ্যৎ খাদ্য। এগুলো যেমন সস্তা, তেমনি এতে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন রয়েছে, আছে ভিটামিন বি।

মটরশুঁটি, শিমসহ মটরজাতীয় উদ্ভিদ সমুদ্রের তীর থেকে শুরু করে পাহাড়ের ঢাল পর্যন্ত এলাকার বিস্তৃত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম।

বিশ্বে ২০ হাজার প্রজাতির মটরজাতীয় উদ্ভিদ আছে। কিন্তু এগুলোর মাত্র কয়েকটি প্রজাতি আমরা খাদ্যে ব্যবহার করি।

বনবাদাড়ে এখনো শত শত প্রজাতির মটরজাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে বলে মনে করা হয়। আর এগুলো এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা রয়ে গেছে। 

মোরামা বিন (টাইলোসেমা এস্কুলেন্টাম) বতসোয়ানা, নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু অংশে একটি প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব স্থানে এই বীজ সিদ্ধ করে খাওয়া হয় কিংবা তা পাউডারে পরিণত করা হয়। পরে তা দিয়ে জাউ জাতীয় খাবার বা কোকার মতো পানীয় তৈরি করা হয়।

মটরজাতীয় সব উদ্ভিদই ভোজ্য নয়। কোনগুলো খাওয়ার যোগ্য, কোনগুলো পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে, তা অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন।

সিরিয়াল

সিরিয়াল একধরনের শস্যদানা, যা ঘাস থেকে আসে। এই শস্যদানার ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে। 

বিশ্বে সিরিয়াল জাতীয় ১০ হাজারের বেশি প্রজাতি রয়েছে। নতুন খাদ্যের উৎস হিসেবে এই প্রজাতিগুলোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। 

ফোনিও (ডিজিটারিয়া অ্যাক্সিলিস) হলো একটি পুষ্টিকর আফ্রিকান সিরিয়াল। এটি কুসকুস (কারি), পোরিজ (জাউ) ও পানীয় জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয়ভাবে ফসল হিসেবে ফোনিও চাষ করা হয়। এই উদ্ভিদ শুষ্কাবস্থা সহ্য করতে সক্ষম।

মিছেকলা

মিছেকলা (এনসেট) সাধারণ কলার কাছাকাছি একটি প্রজাতি। এই কলা শুধু ইথিওপিয়ার একটি অংশে খাওয়া হয়।

সাধারণ কলার মতো দেখতে এই ফল অভোজ্য। কিন্তু তার কাণ্ড ও শিকড় গাঁজন করা যায়। তা জাউ (পোরিজ) ও রুটি তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। 

গবেষণায় দেখা গেছে, কলার মতো দেখতে এই ফসলের খাদ্য হিসেবে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।