শিরোনাম
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্দশার কারণে শ্রীলঙ্কা এখন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার শীর্ষে। প্রায় একই অবস্থা লেবাননেরও। আর্থসামাজিকভাবে চরম দুর্দশার মধ্যে আছে দেশটি। গত কয়েক বছরে কয়েক দফায় সরকার পরিবর্তন হয়েছে। রাজনৈতিক এ অচলাবস্থা সংকটকে বাড়িয়ে দিয়েছে আরও। ক্রমাগত বেড়েছে ঋণের বোঝা। দেশটি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। সংকট কাটাতে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। লেবাননে অস্থিরতার সূত্রপাত হয়েছে মূলত ২০১৯ সালের অক্টোবরে। তখন থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত লেবাননে কখন কী ঘটেছে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
বিক্ষোভ শুরু যেভাবে
২০১৯ সালের অক্টোবরে হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেজিং সার্ভিসগুলোতে ভয়েস কলের জন্য কর ধার্য করার পরিকল্পনা ঘোষণার পর সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হয় গণবিক্ষোভ। নাজুক সরকারি সেবাব্যবস্থা আর দুর্নীতি জর্জরিত দেশটিতে ভয়েস কলের ওপর কর আরোপকে অনেকে নতুন বিপদ বলে মনে করছিলেন। এমন অবস্থায় সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির সরকার একই দিনে ওই কর পরিকল্পনা বাতিল করেন। তবে পরবর্তী সপ্তাহগুলোতেও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। শাসকশ্রেণিকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানান তাঁরা। কাঠামোগতভাবে দুর্নীতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তাঁরা। ওই বছরের অক্টোবরে পদত্যাগ করে হারিরির সরকার।
দেশের ইতিহাসে প্রথম দেউলিয়াত্ব
রাজনৈতিক অচলাবস্থার পাশাপাশি ৯ হাজার ২০০ কোটি ডলারের ঋণের বোঝা সামলাতে হিমশিম খেতে থাকে শ্রীলঙ্কা। এ ঋণের পরিমাণ দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ১৭০ শতাংশ। ২০২০ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কা ঘোষণা করে, দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণ পরিশোধে অক্ষম তারা। এপ্রিলে টানা তিন রাত ধরে সহিংস সংঘর্ষের পর তখনকার প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেছিলেন, সরকার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা অনুমোদন করলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সহায়তা চাইবে লেবানন। তবে আইএমএফের সঙ্গে সে আলোচনা আর এগোতে পারেনি।
ভয়াবহ বিস্ফোরণ
২০২০ সালের ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এতে দুই শতাধিক মানুষ নিহত ও কমপক্ষে সাড়ে ৬ হাজার মানুষ আহত হয়। ছয় বছর ধরে একটি গুদামে মজুত থাকা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে এ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানার পর বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা
বিক্ষোভ দমনে সেই পুরোনা পদ্ধতি ধরপাকড়ের আশ্রয় নেয় সরকার। তবে সুবিধা করতে পারেনি। এ বিস্ফোরণের পরপরই দিয়াব সরকার পদত্যাগ করে। এ সরকার মাত্র সাত মাস ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে।
দিয়াব সরকারের পদত্যাগের পর কূটনৈতিক মুস্তফা আদিবকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে তিনি এক মাসও টিকতে পারেননি। এরপর অক্টোবরে আবারও প্রধানমন্ত্রী পদে হারিরির নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে এ পদে তিনি তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন।
শোচনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি লেবানন
লাগামহীন অর্থনৈতিক মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করা হয় রুটির দাম আরও বাড়বে। ওই বছরের জুনে বিশ্বব্যাংক আভাস দেয়, লেবাননের অর্থনৈতিক ধসজনিত এ পরিস্থিতি ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগের পর থেকে ঘটা সবচেয়ে শোচনীয় পরিস্থিতি হয়ে উঠতে পারে।
নতুন সরকারের আবির্ভাব
৯ মাস ধরে রাজনৈতিক বাগ্বিতণ্ডা চলার পর ২০২১ সালের ১৫ জুলাই সরে দাঁড়ান হারিরি। বলেন, তিনি সরকার গঠনে অক্ষম। এরপর গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ধনকুবের নাজিব মিকাতি নতুন সরকার গঠন করেন। এরপর বৈরুত বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে বিচারপতি তারেক বিতারের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ
২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর তারেক বিতারের পদত্যাগের দাবিতে হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্র আমাল মুভমেন্ট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে গুলি চলে। নিহত হন ৭ জন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আরও ঘনীভূত হতে থাকে।
আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা
২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি লেবাননের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ। প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর মধ্যে কয়েক মাসের আলোচনার পর প্রথমবারের মতো আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক হয় মিকাতি সরকারের। গত ১১ ফেব্রুয়ারি লেবাননে আর্থিক সংস্কার আনার সুপারিশ করে আইএমএফ। দেশটির ঋণের বোঝা সামলানোর পাশাপাশি বিশ্বাসযোগ্য মুদ্রাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আর্থিক সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। গত ৭ এপ্রিল ঋণদাতা সংস্থাটি জানায়, চার বছরে লেবাননকে ৪০০ কোটি ডলার সহায়তা প্রদান করতে কর্মী পর্যায়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছেন তাঁরা।
১৫ মে দেশটিতে নতুন নির্বাচন হবে। এখন দেখার বিষয় আর্থসামাজিকভাবে চরম দুর্দশা লেবাননের কাটে কি না।