শিরোনাম
জার্মানির নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিত্রদের অস্ত্র দিতে ‘লেন্ড-লিজ অ্যাক্ট’ পাস করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে সেই আইন আবার ফিরিয়ে আনল দেশটি। সম্প্রতি এ–সংক্রান্ত আইনে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইউক্রেনে দ্রুত অস্ত্র সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ আইনে সই করে জো বাইডেন বলেন, ইউক্রেনীয়রা তাদের দেশ ও গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে যে লড়াই করছে, তাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বসে এ আইনে সই করেছেন বাইডেন। আইনে সই করার পর তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের সহায়তার জন্য ৩ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা প্যাকেজটি কংগ্রেসে যাতে দ্রুত অনুমোদন পায়, সে জন্য তিনি রাজনৈতিক আপসের জন্যও প্রস্তুত বলে ইঙ্গিত দেন। এ ছাড়া এই অর্থসহায়তা দিতে দেরি হলে যে ক্ষতি হবে, সেই ক্ষতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে বলেও সতর্ক করেন বাইডেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন দিনে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মানির নাৎসিদের বিরুদ্ধে বিজয় উপলক্ষে রাশিয়ার মস্কোর রেড স্কয়ারে আয়োজিত বর্ণাঢ্য বার্ষিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন পুতিন। যদিও এদিন পুতিন বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ইউক্রেন যুদ্ধেও আমরাই জিতব।’
ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও ১৯৪০-এর দশকে জার্মানির নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিত্র ছিল তারা। সেই সময় নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রকে পাশ কাটাতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট লেন্ড-লিজ অ্যাক্ট পাস করেছিলেন। মূলত ইউরোপের মিত্রদের কাছে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করতে স্মরণীয় ওই উদ্যোগ নেন রুজভেল্ট। এখন ইউক্রেনে ট্যাংক–বিধ্বংসী, উড়োজাহাজ–বিধ্বংসীসহ শক্তিশালী ও আধুনিক সব অস্ত্র পাঠাতে বাইডেন এ পদক্ষেপ নিলেন।
এ আইনে সই করার জন্য বাইডেন যে দিনটি বেছে নিয়েছেন, সেটিও প্রতীকী অর্থে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ৮ মে পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নাৎসিদের বিরুদ্ধে বিজয়ের দিন হিসেবে উদ্যাপন করে থাকে। ঠিক এর পরদিন, অর্থাৎ ৯ মে ওই বিলে সই করেন তিনি। ৯ মে দিনটিও আরেকটি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। দিনটিকে ইউরোপ ডে হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৫০ সালের এই দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠন করা হয়েছিল। বাইডেন তাঁর বিবৃতিতে এই দিনের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে বাইডেনের এমন ঘোষণার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লেন্ড-লিজ অ্যাক্টে সই একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। আমি এ বিষয়ে সম্মত যে আমরা সবাই একসঙ্গে জয়লাভ করব। আমরা ইউরোপের এবং ইউক্রেনের গণতন্ত্র রক্ষা করব, যেমনটা ঘটেছিল ৭৭ বছর আগে।’
ইউক্রেনকে পূর্ণ সমর্থন জার্মানি-ফ্রান্সের
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া জার্মানি ও ফ্রান্সও ইউক্রেনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
জার্মানির বার্লিনের ব্রানডেনবার্গ গেট পরিদর্শনকালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ইউক্রেনের প্রতি তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতে ব্রানডেনবার্গ গেটটি দেশটির জাতীয় রঙে রঙিন করা হয়েছিল। এই স্থাপনা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মাখোঁ। এ সময় সঙ্গে ছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ।
অন্যদিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী কিয়েভ সফর করেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বারবক ও ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপকে হোয়েকস্ট্রা। সফরকালে তাঁরা ইউক্রেন সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।