পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বৈশ্বিক চাপে ইন্দোনেশিয়া

ফানাম নিউজ
  ১০ মে ২০২২, ০৮:২২

পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ইন্দোনেশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছেই। এই তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে খাবারের দাম বাড়ছে।

 কম উৎপাদন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট শ্রমিক–সংকটে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাম তেল রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়াতেই তেলসংকট দেখা দেয়। ফলে, দেশটি পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, দেশে রান্নার তেল–সংকটের স্বল্পমেয়াদি সমাধানের অংশ হিসেবে গত ২২ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দেন। দেশটির বাণিজ্য সহযোগীরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়নি। তবে ভারত, পাকিস্তানের মতো উঠতি অর্থনীতির দেশগুলোতে অসন্তোষের লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে।

যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রকাশ্যে না বললেও আড়াল থেকে দেশগুলো জাকার্তাকে বার্তা দিচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অ্যাডজাক্ট ফেলো জেম গিল্ড আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত পাম তেল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক নালিশ জানানো হবে। বিশেষ করে যখন এ বছরের শেষের দিকে বালিতে জি-২০ সম্মেলন হবে। এটা আসলে জি-২০ সভাপতিত্ব করছে এমন একটি দেশের (ইন্দোনেশিয়া) কাছ থেকে প্রত্যাশিত আচরণ নয়।’

জাকার্তাভিত্তিক আরেক অর্থনীতি বিশ্লেষক এগা কুরনিয়া ইয়াজিদ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রধান পাম তেল আমদানিকারক দেশগুলো (চীন, ভারত ও পাকিস্তানের মতো) দেশটির রপ্তানি বন্ধের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায়নি।’ তবে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এই বিশ্লেষক বলেছেন, সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ না জানালেও ওই দেশগুলো খাবারের দাম বাড়াচ্ছে।

বাণিজ্যিক বাধা

গত এপ্রিলে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতে রাপ্তানির জন্য তিন লাখ টন পাম তেল ইন্দোনেশিয়ায় আটকা পড়ে। মালয়েশিয়ার পর ইন্দোনেশিয়া হলো ভারতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাম তেল রপ্তানিকারক দেশ। চলতি মাসে পাকিস্তানেও পাম তেলের মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনের ৮০ শতাংশ পাম তেলই ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে।

অর্থনীতি বিশ্লেষক ইয়াজিদ আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রপ্তানি বন্ধের সবচেয়ে বড় প্রভাব হলো, বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে যাওয়া, যা সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি দামের রেকর্ডে পৌঁছায়। এখন পর্যন্ত মালেয়শিয়া বিশ্বব্যাপী পাম তেলের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে কিন্তু সেটা সম্ভবত যথেষ্ট হবে না।’

আরেক বিশ্লেষক গিল্ড মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রভাব কতটা হবে, সেটা নির্ভর করছে নিষেধাজ্ঞা কত দীর্ঘ সময় থাকে সেটার ওপর।

বিশ্লেষক গিল্ড আরও মনে করেন, পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সরকার দেশের জনগণকে এটা বোঝাতে চাইছে যে রান্নার তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ‘কিছু একটা’ করছে তারা। তেলের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে সরকারের এই ‘কিছু একটা’ করার বার্তা যখন জনগণের কাছে পৌঁছাবে, তখন পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাও উঠে যাবে বলে মনে করেন তিনি। গিল্ড আরও মনে করেন, পাম তেল রাপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পুরো বিষয়টি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া।

২০২০ সালে ইন্দোনেশিয়া ৩ কোটি ৪০ লাখ টন পাম তেল রপ্তানি করেছে। দেশটির পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, এই রপ্তানি থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে।