শিরোনাম
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উত্তর-পশ্চিমে তেভারের মহাকাশ গবেষণা ইনস্টিটিউটে মারাত্মক আগুন লেগেছিল। পার্মের একটি গোলাবারুদের কারখানাতেও ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, যা তেভারের কারখানাটি থেকে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এ ছাড়া বেলারুশের কাছে রাশিয়ার শহর ব্রিয়ানস্কের দুই আলাদা তেলের ডিপোতে আগুন লাগে।
সব ঘটনাই কি কাকতালীয়? নাকি এসব ঘটনা ইউক্রেন বা তাদের সমর্থকদের রাশিয়ায় ঢুকে নাশকতা চালানোর চিহ্ন, যারা ইউক্রেন আক্রমণের জন্য মস্কোকে শায়েস্তা করতে চাইছে। পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
তেভারের কেন্দ্রীয় মহাকাশ গবেষণা ইনস্টিটিউটে আগুন লাগে ২১ এপ্রিল, যাতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর থেকেই রাশিয়ার অভ্যন্তরে যেকোনো অগ্নিকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। বিশেষ করে সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে এ রকম ঘটনা, যা গোপন আক্রমণেরই ইঙ্গিত দেয়।
কেউই এসব নাশকতার দায় স্বীকার করেনি। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, কয়েকটি আক্রমণ বিশেষ করে ব্রিয়ানস্কের ঘটনাগুলো কিয়েভের কাজ হতে পারে। এই ধারণার পালে হাওয়া দিয়েছে মিখাইল পোদোলিয়াকের একটি টেলিগ্রাম পোস্ট। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ এই উপদেষ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়ায় নাশকতার ঘটনাগুলোকে ‘ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে বড় তেলের ডিপোগুলো পর্যায়ক্রমে জ্বলতে থাকে। এ ছাড়া ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কর্মফল খুবই নিষ্ঠুর’।
রাশিয়ার মতো অনেক বড় একটি দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কারখানা বা ভবনে আগুন লাগা তেমন কোনো ভ্রু-কুঁচকানোর মতো ব্যাপার নয়। কিন্তু ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর এসব ঘটনার অর্থ বদলে গেছে। রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর থেকে এক ডজনের বেশি আগুন লাগার কথা জানা গেছে। তাই গত মাসে রাশিয়ার পূর্বে ভ্লাদিভস্তক শহরের উত্তরের বিমানঘাঁটি ও সাখালিন দ্বীপের কয়লা খনিতে আগুন নাশকতার সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, গত বুধবার মস্কোর পূর্ব পাশে দিজারিজস্কে রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর ইউক্রেনের একজন রেস গাড়িচালক বলেন, ‘রাশিয়ার নাশকতাকারীরা পুতিনের বিরুদ্ধে তাদের ঐতিহাসিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’ এই চালক রাশিয়ার ভেতর বিভিন্ন নাশকতার ঘটনার ছবি ও ভিডিও নিয়মিত টুইটারে পোস্ট করেন। তবে এসব অগ্নিকাণ্ড যে পরিকল্পিত নাশকতা, সে বিষয়ে তিনি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
জেলেনস্কির আরেকজন উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্তোভিচও মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ইসরায়েল কখনোই তার গোপন হামলা বা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে না। ‘আমরা স্বীকার করছি না, অস্বীকারও করছি না।’
সমর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্রিয়ানস্কের ইউরোপের তেল সরবরাহ পরিষেবায় হামলা ইচ্ছাকৃত এবং এটা যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত।
‘ইউক্রেন ওয়েপন ট্র্যাকার’ নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ আছে যে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা থেকেই ব্রিয়ানস্কে আগুন লেগেছে।
আরেকজন বিশেষজ্ঞ রব লি গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা ছিল ইউক্রেনের হামলা। তবে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই।’
এ ছাড়া ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধক্ষেত্রের কাছে রাশিয়ার বেলগোরোদ ও কুরস্ক শহরে হামলা হয়। ১ এপ্রিল বেলগোরোদের জ্বালানি ডিপো হামলার পর শহরের গভর্নর হামলার জন্য ইউক্রেনের সেনাদের হেলিকপ্টার হামলাকে দায়ী করেন।
সমর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফিলিস ও’ব্রায়েন বলেন, ‘রাশিয়ার কৌশলগত বা সামরিক স্থাপনায় অনেক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এটা এসব হামলা ইউক্রেনিয়ান নাশকতা, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।’
স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, এসব হামলা ‘নিশ্চিতভাবেই তাঁদের পরিকল্পনার অংশ’।