শিরোনাম
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জার্মানিতে নজিরবিহীন মূদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে।
গত চার দশকে এই পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতি হয়নি জার্মানিতে। মার্চ মাসে মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে সাত দশমিক তিন শতাংশে।
১৯৮১ সালে পশ্চিম জার্মানি শেষ এমন দ্রুত মুদ্রাস্ফীতি দেখেছিল। ইরান-ইরাক যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বহু গুণ বেড়ে যাওয়ার ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছিল। এবার ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ফের মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য।
গত মার্চি মাসে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি সাত দশমিক তিন শতাংশে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। চলতি এপ্রিল মাসে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। যা গত চার দশকে ঘটেনি। হিসেব বলছে, জিনিসপত্রের দাম গত মার্চ মাসের তুলনায় সাত দশমিক চার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা অভূতপূর্ব।
তেল এবং গ্যাসের দাম বাড়ার কারণেই এই হারে মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, ইউরোপের আরো অনেক দেশের মতো জার্মানি তেল এবং গ্যাসের ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই দেশের এনার্জি খাতে ব্যয় বাড়তে থাকে। তারই প্রতিফলন ঘটছে সার্বিক অর্থনীতিতে।
বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। রাশিয়া যেভাবে পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে, এবার তা জার্মানিতেও করতে পারে। বস্তুত, তার জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন চ্যান্সেলর। একইসঙ্গে জানিয়েছেন, আগে থেকে আশঙ্কিত হয়ে লাভ নেই, পরিস্থিতি যেমন হবে, তার সঙ্গে লড়াই করতে হবে।
সমস্যা কেবল জার্মানির নয়। গোটা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। গত একমাস ধরে ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। হাঙ্গেরি জ্বালানি এবং খাবারের দাম ফ্রিজ করে দিয়েছে। জাপানে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানেও শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক সংকট।
ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আফ্রিকায় খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে, যা সামাজিক লড়াইয়ের চেহারা নিতে পারে। সব মিলিয়ে গোটা বিশ্বজুড়েই এক অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ সেই অবস্থায় আরো ইন্ধন দিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য।
মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্বের পণ্য বাজারে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসতে যাচ্ছে। অর্থাৎ ১৯৭০ সালের পর প্রথম বারের মতো এমন সংকট তৈরি হতে পারে।
বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সংঘাতের কারণে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে শুরু করে গম ও তুলা পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যের দাম ইতোমধ্যেই বেড়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। বিশ্বজুড়ে জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়বে মানুষ।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, জ্বালানির দাম ৫০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। ফলে সংসারের ব্যয় এবং ব্যবসায়ের খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিশ্ব টানা ২৩ মাস জ্বালানির দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার কারণে ১৯৭৩ সালে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির পর এটাই দীর্ঘতম সময় ধরে জ্বালানির দাম যাওয়ার ঘটনা।
একইভাবে জ্বালানি তেলের দামও ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়তি থাকবে এবং চলতি বছরজুড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম গড়ে ১০০ ডলারে বিক্রি হবে, যা বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
অনেক খাদ্য পণ্যের দাম হঠাৎ করেই লাফিয়ে বেড়ে গেছে এবং আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গমের দাম ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তে পারে। খাদ্য পণ্যের মধ্যে বার্লি ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ, সয়াবিন ২০ শতাংশ, ভোজ্য তেল ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ ও মুরগির দাম ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়তে পারে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে এসব পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে বিশ্বের মোট সয়াবিনের ৬০ শতাংশ এবং গম রপ্তানির ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ এ দুই দেশ থেকেই আসতো।
সূত্র: দেশ রূপান্তর