শিরোনাম
ভোটের দিন বুথে বুথে ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করেছেন, সুকৌশলে নিঃশব্দে ভোটের আবেদন করেছেন প্রায় সব দলের প্রার্থী। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বরাবরের মতোই উলটো পথে হাঁটেন। প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের দিন তিনি নিজেকে আড়ালেই রাখেন। নিজের ঘরে বসে তিনি টেলিফোনে দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ভোট পরিচালনা করেন।
বৃহস্পতিবার কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে এবারও তাকে নীরবে ভোট দিতে দেখা যায়। তৃণমূল ও বিজেপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যেও ভবানীপুর উপনির্বাচনে উৎসবের আমেজে ছিল। চেতলায় বামেদের সঙ্গে তৃণমূলের রাজনৈতিক দূরত্ব দূর হয়ে গিয়েছিল।
ভোট শেষ হতেই মমতার ভোটযুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি, কলকাতার মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দাবি করেন, প্রদত্ত ভোটের ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন মমতা। ২০১১ সালে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ভবানীপুর উপনির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৩৯ শতাংশ। সেবার প্রদত্ত ভোটের ৭৪ শতাংশ মমতা পেয়েছিলেন। এবার ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ। রোববার ভোটগণনা হবে। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট হলেও রাজনৈতিক মহলেরও নজর ছিল ভবানীপুর কেন্দ্রের দিকে। কারণ সেখানে প্রার্থী ভারতীয় রাজনীতিতে মোদি বিরোধী মুখ হিসাবে পরিচিত মমতা। বিজেপির প্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল, বামেদের প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস। তাই এদিন ভবানীপুরে মমতার ভোটকেন্দ্রে হাজির ছিল দেশ-বিদেশের কয়েকশ মিডিয়া ও সাংবাদিক। বিকাল ৩টা ১২ মিনিটে ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দেন মমতা। বুথে প্রবেশের আগে ভোটারদের উদ্দেশে নমস্কার জানান তিনি। দ্রুত ভোট দিয়ে তিনি গাড়িতে উঠে পড়েন।
নিজের চেনা ঘর ভবানীপুরে জয়ের বিষয়ে তিনি যে আত্মবিশ্বাসী, সে ইঙ্গিত ভোটের আগের দিনও মিলেছে। কারণ উপনির্বাচনের ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় ইন্দ্রনীল সেনের বাড়িতে গানের আসরে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। আর নির্বাচনের দিন অভ্যেস মতোই থাকলেন নিজ বাড়িতে।
এদিকে, ভবানীপুরের ভোটগ্রহণ শুরুর ঘণ্টা দুয়েক পরই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের টুইট ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। ঘটনার জল গড়ায় নির্বাচন কমিশনেও। বিজেপির অভিযোগের পালটা জবাব দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম।
সকাল থেকে ভবানীপুরের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ান ফিরহাদ হাকিম। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি টুইট করেন। উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে ভোটদানের আরজি জানান তিনি। তবে সুব্রতের দাবি অন্যরকম। টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাকের অভিযোগে শেক্সপিয়র সরণি থানার দ্বারস্থ হন তিনি।
বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ- ভবানীপুরের বিভিন্ন বুথে জাল ভোট দিয়েছে তৃণমূল। বহিরাগতদের দিয়ে ভুয়া ভোট দেওয়া হয়েছে। ভবানীপুরের খালসা স্কুলে গুরুশরন সিং নামে এক ভোটারকে ভুয়া ভোটার অভিযোগে প্রিয়াঙ্কা তাড়াও করেন।
পরে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করে বিজেপি। কিন্তু দেখা যায়, ওই ভোটার ভুয়া নন, প্রকৃত ভোটারই। কমিশনে বিজেপি অনেক অভিযোগ করলেও কোনোটি গুরুত্ব পায়নি।
ভবানীপুর ভোট পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে সিপিএমের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বামশিবির থেকে চায়ের আহ্বান পেয়ে ফিরহাদ দাঁড়িয়েই চা খেলেন। শুধু ভবানীপুরেই নয়, ভোটযুদ্ধে শামিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরেও এমনই রাজনৈতিক সৌজন্যের ছবি দেখা গেল।
গাড়িতে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন জঙ্গিপুরের তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেন। তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় বিজেপি প্রার্থী সুজিত দাসের। উভয়ে নমস্কার বিনিময় করেন।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দু’জনে মিলে কথা বলেন। তাদেরও বার্তা একটাই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা সব ভোটের ময়দানে। তার বাইরে সৌজন্য বিনিময়টাই স্বাভাবিক।
এখানে কোনো লড়াই নেই। সামসেরগঞ্জেও মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে সৌজন্য বিনিময় করেন।