শিরোনাম
ভারতে খাদ্য, বস্ত্র, ভাষাকে সামনে রেখে শাসকদল বিজেপি নিরন্তর মেরুকরণের চেষ্টা চালিয়ে সমাজকে বিভাজনের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ এনে সমালোচনায় মুখর হলেন সোনিয়া গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ ১৩ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
রবিবার আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশবাসীকে লেখা ১৩ দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীর এক চিঠিতে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বিভাজনের রাজনীতি রোখার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর নীরব দর্শকের ভূমিকারও তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।
সম্প্রতি রামনবমী উপলক্ষে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার দিল্লিতে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এর পেছনে শাসক শিবিরের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা।
দেশবাসীর উদ্দেশে ১৩ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের লেখা এক খোলা চিঠিতে শান্তিরক্ষার আবেদন জানানো হয়েছে। দেশে উসকানিমূলক ভাষণের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, এই ধরনের ঘটনাগুলোতে শাসক শিবির প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে চলেছে। আর সে কারণেই উসকানিমূলক বা ঘৃণা ভাষণের পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না সরকারকে। যা প্রবল উদ্বেগের বলেই মনে করছেন বিরোধী নেতা-নেত্রীরা।
একাধিক রাজ্যে আমিষ খাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অন্য দিকে গোটা দেশে জাতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকে তুলে ধরার পক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। চিঠিতে এ ধরনের ‘চাপিয়ে দেওয়া ফরমানে’র তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছে, খাদ্য, পরিধেয় বস্ত্র, ভাষা, ধর্মবিশ্বাস ও উৎসবকে হাতিয়ার বানিয়ে শাসক শিবিরের একাংশ সমাজে মেরুকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সমাজকে এ ভাবে বিভাজনের প্রচেষ্টা অত্যন্ত যন্ত্রণার বলে চিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে। ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে সামাজিক মাধ্যম এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল মাধ্যমের অপব্যবহারে সরকারি ভাবে মদদ দেওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
সোনিয়া, মমতা, স্ট্যালিন, তেজস্বী, ইয়েচুরি, পওয়াদের লেখা বিরোধীদের ওই চিঠির মাধ্যমে দীর্ঘ দিন পর ভারতের কোনো একটি বিষয়ে এক ছাতার নিচে আসল কংগ্রেস-বাম-তৃণমূল-ডিএমকে-এনিসিপির মতো দলগুলি। দীর্ঘ দিন ধরেই বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জোট গড়ে তোলার পক্ষপাতী মমতা। তিনি গোয়ায় উদ্যোগ নিলেও কংগ্রেস সম্পর্কে তার মনোভাব এবং নানা কারণে সেই জোট গঠন এখনো বাস্তবে আকার নেয়নি। রাজনীতির অনেকের মতে, আজ যে ভাবে প্রায় সব বিরোধী দল বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে এক মঞ্চ থেকে সরব হয়েছে, তা যথেষ্টই আশাব্যাঞ্জক। আগামী দিনে দেশ জুড়ে ওই জোট যদি কার্যকর করা সম্ভব হয়, সে ক্ষেত্রে বিজেপিকে লোকসভা ভোটে চাপে ফেলা যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ওই চিঠির পাশাপাশি একটি সর্বভারতীয় দৈনিকে ‘বিভেদের রাজনীতি’ প্রসঙ্গে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী লিখেছেন, দেশের মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়ে পাকাপাকি ভাবে মেরুকরণের পথে হাঁটার কৌশল নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা শাসক শিবির। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় গোটা দেশের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য’ কবিতাটি উদ্ধৃত করেছেন।
তবে, ঘৃণার বিরুদ্ধে লেখা বিরোধীদের চিঠি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন, সোনিয়া গান্ধীর আগে দেখা উচিত, কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান কী ভাবে হিংসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের ঘটনা হলে বিরোধীরা চুপ থাকেন।
অনুরাগের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিরোধী শিবির থেকে বলা হয়, যে নেতা প্রকাশ্যে সভা করে প্রতিবাদকারীদের ‘গোলি মারো’ বলতে পারেন, তাকে গুরুত্ব না দেওয়াই ভালো।
সূত্র: আনন্দবাজার ও দেশ রূপান্তর