শিরোনাম
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। দেশটির রাজধানী কিয়েভের কাছে, বিভিন্ন শহরে একের পর এক গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর গোটা বিশ্ব থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর মনোভাব পোষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো। এরই মধ্যে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কারণে বিশ্বের ২০টির মতো দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে চারশোর বেশি রুশ কূটনীতিককে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ এপ্রিল পর্যন্ত রাশিয়ার ৪৪৩ কূটনীতিক বহিষ্কৃত হয়েছেন বা বহিষ্কারাদেশের মুখে পড়ছেন। তাদের মধ্যে প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডেই ৪৫ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। স্লোভাকিয়া ৩৮ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে স্লোভেনিয়া ৩৩ জনকে বহিষ্কার করেছে।
গত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত জার্মানি ৪০ জন রুশ কূটনীতিক ও ফ্রান্স ৩৫ জনকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। জাপান রাশিয়ান দূতাবাসের ১০ শতাংশের নিচে স্টাফদের মধ্যে ৮ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই তালিকায় জাপানে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিখাইল গালুজিনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ভিয়েনা কনভেনশনের শর্ত অনুযায়ী, কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কূটনীতিকরা তাদের নিযুক্ত দেশ, প্রাসঙ্গিক তথ্য ও তাদের নিজ নিজ সরকারের উন্নয়নের তথ্যাদি দিতে দায়ী থাকবে।
কোনো কূটনীতিক যদি অপরাধমূলক কাজে জড়ান এবং তিনি যে দেশের নাগরিক তারা যদি তার কূটনৈতিক অব্যাহতি (ইমিউনিটি) প্রত্যাহার করে, তবেই তিনি যে দেশে অপরাধ করেছেন, সে দেশে বিচার করা সম্ভব, অন্যথায় নয়। কিন্তু তাদের উপস্থিতির জন্য তাদের নিজ দেশ ও নিযুক্ত দেশ উভয়ের সম্মতি প্রয়োজন।
এর আগে জাপান তিনবার কূটনৈতিক বহিষ্কারাদেশ এনেছিল। ১৯৭৩ সালে টোকিওর একটি হোটেল থেকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা কিম দেই-জংকে অপহরণ করার অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়ার এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে জাপান।
২০০৬ সালে অবৈধভাবে জুয়া খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আইভরি কোস্টের এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে দেশটি। এ ছাড়া ২০১২ সালে সিরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে আসাদ সরকারের বেসামরিক লোকদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়।
নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক তোমোনোরি মিজুশিমা বলেছেন, একাধিক ব্যক্তিকে বহিষ্কার করে জাপান এবার সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা জাপানে রয়েছেন, তাই দূতাবাসের কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে না। তবে এটি রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে জাপানের বড় পদক্ষেপ।
তবে জাপান চাইলে আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে পারে এবং সেটি হচ্ছে আরও বেশি কূটনীতিককে বহিষ্কার করা।রাষ্ট্রদূতকেও বহিষ্কার করা হতে পারে অথবা দূতাবাস পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপও হতে পারে।
দ্য ইকোনমিস্টের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে সাবেক রুশ গুপ্তচরকে নার্ভ এজেন্ট দিয়ে আক্রমণ করার অভিযোগে ২৮টি পশ্চিমা দেশ থেকে ১৫০ জনের বেশি রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এবার বহিষ্কার করা হয়েছে তার দ্বিগুণেরও বেশি রুশ কূটনীতিককে।
পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়াও ৪৫ পোলিশ কূটনীতিকের ওপর থেকে তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা তুলে নিয়েছে। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাস’র তথ্য বলছে, জাপানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জাপান সরকার এর আগে রাশিয়ান কূটনীতিকদের বহিষ্কার করতে কিছুটা দ্বিধার মধ্যে ছিল। কেননা এই ধরনের পদক্ষেপ রাশিয়ায় জাপানি নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এমন আচরণ কূটনৈতিক সম্পর্কগুলোকে আরও জটিল করে তুলছে।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া