শিরোনাম
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অবশেষে স্বীকার করলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার যৌথ সিদ্ধান্তে রাশিয়ার জ্বালানিপণ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ক্ষতির মুখে পড়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনে হামলার পরই রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে আমেরিকা এবং নেটো দেশগুলো। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। এরপর শাস্তিস্বরূপ আর্ন্তজাতিক বাজারে রাশিয়ার তেল রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নেয় দেশগুলি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো জানিয়েছে যে, তারা আর কেনও ভাবেই রুশ তেল-গ্যাস কিনে পুতিনকে যুদ্ধের জন্য আর্থিক সাহায্য পাওয়ার সুযোগ করে দেবে না। তেলের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয় বলেও ইউরোপের দেশগুলো জানিয়েছে।
তেল ও গ্যাসের জন্য ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়া নির্ভরতা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে না পারলেও পুতিন স্বীকার করেলেন যে, নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে। জ্বালানি পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়ায় শিল্পের খরচও বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার নিজের বাসভবন থেকে ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন উল্লেখ করেন যে, রাশিয়া থেকে জ্বালানিপণ্য নিয়ে বহু দেশ এখনও টাকা পাঠায়নি। পাশাপাশি নতুন করে অশোধিত তেলজাত পদার্থের রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় রাশিয়া ক্ষতির মুখে পড়েছে। তেল রপ্তানি করা এই মুহূর্তে দেশের সব থেকে বড় সমস্যা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে ইউরোপ জ্বালানিপণ্য এবং গ্যাসের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা পেলেও তা সময়সাপেক্ষ বলেই মত পুতিনের। আর সেই কারণেই তিনি আশাবাদী যে, খুব শীঘ্রই আবার খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য ক্রেমলিনের দিকে ফিরে তাকাবে ইউরোপীয় দেশগুলো।
পুতিন বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ওপর নির্ভরতা কমানোর যে সিদ্ধান্ত ইউরোপের দেশসমূহ নিয়েছে, পুরো বিশ্বব্যবস্থায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে; এবং ইউরোপই এই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে।
ভাষণে পুতিন বলেন, ‘এটা খুবই অবাক করার মতো ব্যাপার যে, আমাদের তথাকথিত (পশ্চিমা) অংশীদাররা নিজেরাই স্বীকার করেছে যে রাশিয়ার গ্যাস ছাড়া তারা চলতে পারবে না’।
‘এবং এটাও সত্য যে, রাশিয়ার পরিবর্তে বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি কেনার যে সিদ্ধান্ত ইউরোপ নিয়েছে, তার ফলে পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নিঃসন্দেহে সেই প্রভাব হবে খুবই যন্ত্রণাদায়ক; এবং তার প্রথম ভুক্তভোগী হবে ইউরোপ নিজেই’।
পুতিন বলেন, ‘রাশিয়া যে দামে ইউরোপে প্রতি বছর জ্বালানি সরবরাহ করে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলের পক্ষে এই মুহুর্তে এই দামে জ্বালানি সরবরাহ করা সম্ভব নয়। প্রাথমিকভাবে ইউরোপ জ্বালানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে, তবে যে দামে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গ্যাস কিনবে- তা অনেক বেশি। এতটাই বেশি, যে এ কারণে ইউরোপের সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান নেমে যাবে, ইউরোপের অর্থনীতিও সংকুচিত হবে’।
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ইউরোপ ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ইউরোপের বার্ষিক জ্বালানি গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ সরবরাহ আসে রাশিয়া থেকে। এছাড়া রাশিয়ার কয়লা ও তেলের ওপরও ইউরোপের নির্ভরশীলতা অনেক।
গ্যাসের ওপর যদিও এখনও নিষেধাজ্ঞা দেয়নি ইউরোপ, তবে ইউরোপের দেশসমূহের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি বন্ধ করবে ইউরোপ। চলতি বছর থেকেই রাশিয়ার ওপর গ্যাস নির্ভরতা ৬০ শতাংশ কমানোর চেষ্টা করছে ইইউ।
সূত্র: দেশ রূপান্তর