পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ

ফানাম নিউজ
  ১৫ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৪৭
আপডেট  : ১৫ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৪৮

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে ইমরান খানকে হটিয়ে ক্ষমতায় এখন শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সর্বোচ্চ নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে দেশে ফেরাতে তৎপর হয়েছেন শাহবাজ।

দেশটির এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে উদ্বেগময় সম্পাদকীয় ছাপিয়ে পাকিস্তানের শীর্ষ দৈনিক ডন। 

যেখানে বলা হয়েছে, শাহবাজ শরীফ এমন এক সময়ে সরকার গঠন করেছেন যখন পাকিস্তানে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় চলছে।

সম্পাদকীয়টিতে ডন লিখেছে, যেকোনো সংজ্ঞায়, পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ। স্বীকার্য যে, নতুন জোট সরকার ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, আর্থিক ও চলতি হিসাবের ঘাটতি বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের দ্বারা জর্জরিত অর্থনীতির উত্তরাধিকারী হচ্ছে। পাকিস্তানের অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

পাকিস্তানের সাবেক অর্থমন্ত্রী শওকত তারিনের দাবি, ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার সময় তেহরিক-ই-ইনসাফ যে অর্থনীতি পেয়েছিল, সেটিকে আরও ভালো অবস্থায় রেখে যাওয়া হয়েছে। যা অস্বীকার করার উপায় নেই।

কিন্তু অর্থনীতিকে আরও উন্নত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া কিংবা মুদ্রাস্ফীতিতে জর্জরিত নাগরিকদের দ্রুত স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা নতুন সরকারের জন্য একটি ভয়ানক কঠিন কাজই হবে। 

ডনের সম্পাদকীয়তে আরো লেখা হয়েছে, পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যাংক বলছে, বর্তমান অর্থবছরে পাকিস্তানের বাহ্যিক অর্থায়ন পরিচিত উৎসগুলো থেকেই পুরোপুরি পূরণ করতে হবে।

বর্তমান ক্ষেত্রে, চলতি হিসাবের ঘাটতি বাড়ছে। কিন্তু পাকিস্তানের অর্থ উপদেষ্টা হতে যাওয়া মিফতাহ ইসমাইলের দাবি অনুযায়ী ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নেই। 

রাজস্ব ঘাটতি ক্রমবর্ধমান হচ্ছে এবং এটি পূর্ববর্তী সরকারের জিডিপির ৬ শতাংশের সামান্য বেশি হতে পারে। তারপরও চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ তা ১০ শতাংশে বাড়বে বললে অত্যুক্তি হবে। 

ডনের সম্পাদকীয় বলছে, পাকিস্তানের অর্থনীতি যে মারাত্মক সংকটে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ যে অর্থনীতি পেয়েছিল, বর্তমানে তা আরও খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। এই ঘটনাকে অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। 

আগের সরকার তৃতীয় দফায় ধনীদের কর মওকুফ করায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তা দিতে বিলম্ব করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা।

চীনও আড়াইশ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ দেওয়ার অঙ্গীকার করেও সময় নিচ্ছে। তারা পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যখন প্রত্যাশামতো ফিরে আসে, তখন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির কাছে অঙ্গীকার রক্ষার প্রতিজ্ঞা করেন মিফতাহ ইসমাইল। চীনও সাহায্যের হাত বিস্তৃত করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এভাবে বাড়তে শুরু করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, অর্থনীতিকে জোরালোভবে পুনরুজ্জীবিত করতে পাকিস্তানের নতুন শাসকেরা বড় কাঠামোগত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে কিনা। তা নিশ্চিত করতে হলে রাজস্ব খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি করের মাধ্যমে রাজস্ব আয় আরও সম্প্রসারিত করতে হবে, ক্ষমতাবানদেরও ছাড় দেওয়া যাবে না। তাদের কাছ থেকে যথাযথভাবে কর আদায় করতে হবে। ধনীরা যাতে কর না দিয়ে রেহাই পেয়ে না যান।

আয় ও ব্যয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনতে স্টিল মিল ও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারিকরণ করতে হবে।

অধিকন্তু, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং আমদানি বিল পরিশোধের জন্য উৎপাদনশীলতা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়াতে প্রশাসন ও নীতি সংস্কার প্রয়োজন। এসব রাজস্ব ও উৎপাদনশীলতা সংস্কারে জোট সরকারের হাতে খুব সময়ও নেই। 

তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই পরিবর্তনের জন্য অর্থনীতির পুনর্গঠনের জন্য পরিবর্তনগুলে এই সরকারকেই করতে হবে । কাজেই নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা জনতুষ্টিমূলক পদক্ষেপ নেবে না বলেই আশা করা যায়।