শ্রীলংকায় করোনার চেয়েও বেশি মৃত্যু হতে পারে

ফানাম নিউজ
  ১২ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৩৮

আর্থিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলংকার রাজনৈতিক সংকটও বাড়ছে। আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে ধুঁকতে থাকা দেশটিতে এবার জরুরি ওষুধ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ওষুধের নতুন চালান না এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসার অভাবে করোনার চেয়েও অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। খবর টাইমস নাউ ও দ্য গার্ডিয়ানের।

দুই সপ্তাহ ধরে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় বন্ধ রয়েছে। দিনে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলো। বিদ্যুতের অভাবে অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা পরিষেবা থমকে পড়েছে। খাদ্যসামগ্রীর দামও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। এসব কারণেই চিকিৎসকদের আশঙ্কা-দেশে বহু প্রাণহানি ঘটতে পারে। 

শ্রীলংকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দরকারি ওষুধ কিছুই আর দেশে মজুত নেই। অ্যানেস্থেশিয়া ওষুধের সংকট থাকায় খুব প্রয়োজন না হলে অস্ত্রোপচারও করা হচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসের উদ্দেশে চিঠি লিখে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আমাদের রীতিমতো বেছে বেছে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে-কে চিকিৎসা পাবেন আর কে পাবেন না। কয়েক দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান না বাড়ালে করোনা মহামারির চেয়েও অনেক বেশি মানুষ মারা যাবে। শ্রীলংকা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানায়, দেশের হাসপাতালগুলো চিকিৎসার জন্য জরুরি বিদেশি ওষুধ ও সরঞ্জাম পাচ্ছে না। ফলে নিয়মিত সার্জারি একেবারে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এ অবস্থা আর কিছু দিন চলতে থাকলে, জীবনদায়ী সার্জারিও বন্ধ করে দিতে হবে।

ব্ল্যাকআউট, খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধ সংকটে পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মানুষ কয়েক দিন ধরে বাধ্য হয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমেছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে কার্যালয় ঢোকার পথ এখন বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে। দুদিন ধরে বিক্ষোভকারীরা নিজেদের দখলে রেখেছেন। বৃষ্টির মধ্যেও রেইনকোট, ছাতা নিয়ে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়েছেন। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোতায়েন রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা সদস্য।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর শ্রীলংকা প্রথম এতটা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৭০ শতাংশ কমেছে। এর ফলে মুদ্রার মূল্যমান কমাতে এবং বৈশ্বিক ঋণদাতাদের কাছে সহযোগিতা চাইতে কলম্বো বাধ্য হয়েছে। জরুরি খাদ্য ও জ্বালানি আমদানিতেও তারা হিমশিম খাচ্ছে। রান্নার জ্বালানি গ্যাসের দাম এক হাজার ১৫০ রুপি থেকে বেড়ে চার হাজার ছাড়িয়েছে। শিশুখাদ্য গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

ইতালিতে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ : ইতালির মিলানের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের কাছে শ্রীলংকার সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করেছে প্রায় এক হাজার শ্রীলংকান নাগরিক। এ সময় তারা লংকান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। শ্রীলংকান সমাজকর্মী ওয়ার্নাকুলসুরিয়া নিসাসা সেই বিক্ষোভ ইভেন্ট লাইভ করেন। সেখানে দেখা যায়-বিক্ষোভকারীরা ‘যাও গোতা যাও’ স্লোগান দিচ্ছেন এবং কুশপুত্তলিকা দাহ করছেন। এ সময় তারা চীনবিরোধেী স্লোগানও দেন। বিক্ষোভে শ্রীলংকার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন শ্রীলংকান বৌদ্ধ, লংকান ইসলামিক ফোরাম অব মিলান, মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব শ্রীলংকা ইন নর্থ ইতালি এবং আরও বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী।

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে চলতে দিলে শ্রীলংকা অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে : অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। তিনি বলেন, বর্তমান সংকট পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার অন্যতম উপায় হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুমতি দেওয়া। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে তাকে স্বাধীনভাবে ব্যাংক পরিচালনার কর্তৃত্ব দিয়েছেন এবং দেশকে সংকট থেকে বের করে আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

শুক্রবার রাতে প্রথম প্রেস ব্রিফিংয়ে নতুন গভর্নর আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেছিলেন যে, তিনি দেশের অর্থনৈতিক সংকট সমাধান করতে পারবেন। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিয়েছি। সোমবার বাজার খোলার পর থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করছি।