পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হলেন শেহবাজ শরিফ

ফানাম নিউজ
  ১১ এপ্রিল ২০২২, ১৯:৩১

পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতা শেহবাজ শরীফ। তিনি সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই।

ব্যবসা সংগঠনের নেতৃত্ব, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব, বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকার পর পাকিস্তানের কঠিন এক সময়ে দেশটির সরকার প্রধান হলেন তিনি।

মিয়া মোহাম্মদ শেহবাজ শরীফের জন্ম ১৯৫১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের লাহোরে। তার বাবা ছিলেন শিল্পপতি মিয়া মোহাম্মদ শরীফ। স্নাতক শেষ করে শেহবাজ শরীফ নিজেও পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘ইত্তেফাক’-এর হাল ধরেন। ১৯৮৫ সালে তিনি লাহোর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৯৮৮ সালে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ব্যবসায়ী শেহবাজ। ১৯৯০ সালে এমএনএ নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলের নেতা হয়ে ওঠেন তিনি।
 
পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলের নেতা হিসেবে সাফল্যের পথ ধরে ১৯৯৭ সালে তিনি লিডার অব দ্য হাউজ নির্বাচিত হন। তখন তিনি কঠোর প্রশাসক হিসেবেও নাম কুড়ান। পাঞ্জাব প্রদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন তিনি।

১৯৯৯ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ পিএমএল-এন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সেই সময় গ্রেপ্তার এবং পরবর্তীতে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে পরিবারসহ নির্বাসিত হন সৌদি আরবে।

জেদ্দাহ ও লন্ডনে থাকাকালে বেশ কয়েক বছর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন শেহবাজ। ২০০৭ সাালের ২৫ নভেম্বর ভাই নওয়াজ শরীফের সঙ্গে পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর থেকে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় তিনি। ২০০৯ সালে পাঞ্জাবের ২১তম মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রদেশের উন্নয়নে এসময় বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্প নেন। তার সামাজিক প্রকল্প ‘সস্তা তন্দুর’ এবং ‘আশিয়ানা ঘর’ প্রশংসা কুড়ায়। দুর্নীতি দমনেও কঠোর অবস্থান নেন তিনি।

২০১৩ সালে তৃতীয় দফা পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শেহবাজ। ২০১৮ সালে পিএমএল-এন পরাজিত হলে এই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। এসময় তিনি জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে অর্থ পাচারের অভিযোগে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো তার ও তার সন্তানের নামে থাকা ২৩ সম্পত্তি জব্দ করলে বিপাকে পড়েন শেহবাজ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে জামিন পান শেহবাজ।

চলতি বছরের মার্চে জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। নানা নাটকীয়তার পর ইমরান খান সেই অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন। প্রধানমন্ত্রীত্বের দুয়ার খোলে শেহবাজের জন্য। পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক সংকটসহ যেসব কারণে ইমরান ক্ষমতা হারিয়েছেন, সেগুলো সামাল দেয়াই এখন পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

দ্বিতীয়বারের মতো এক পরিবার থেকে দুই প্রধানমন্ত্রী পেলো পাকিস্তান। ১৯৯০, ১৯৯৭ এবং ২০১৩ সালে তিন দফায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শেহবাজ শরীফের ভাই নওয়াজ শরীফ। এর আগে একই পরিবার থেকে ১৯৭৩ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং তারপর ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তার মেয়ে বেনজির ভুট্টো। ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয়বারের জন্যেও নির্বাচিত হয়েছিলেন আততায়ীর হামলায় নিহত বেনজির।