শিরোনাম
ঋণ-অভাব-দুর্নীতিতে দেশ রসাতলে তবু ভুলেও ক্ষমতা ছাড়ার কথা মুখে আনছেন না শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। উলটো জোরগলায় বলছেন-পদত্যাগ করবেন না। মন্ত্রিসভা পালটাবেন। তার এই সিদ্ধান্ত যে পালটাবার নয়, শনিবারও সে আলামতও ভেসে উঠেছে ‘দ্বীপে’।
রাজাপাকসে পরিবারের অনুগত দেশটির দুজন বিশিষ্ট আইনজীবী সংবিধানে নতুন আইন সংযোজনের পথ খুঁজে বের করতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। চার ভাইবিহীন নতুন সরকারে নিজের গদি নিরাপদ রাখতেই এই আগাম আয়োজন গোতাবায়ার।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের আগেই তাদের প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের একক ক্ষমতা হাতিয়ে নিচ্ছেন গোতাবায়া। যার অর্থ দাঁড়ায়-নিজের ইচ্ছের চরকায় ঘুরাবেন ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে! সুতরাং বশে থাকতে বাধ্য।
রাজাপাকসে পরিবারের দুর্নীতি, রিজার্ভ সংকট ও চরম মুদ্রাস্ফীতির জেরে শুধু সরকার পতন আন্দোলনের মধ্যেই গোতাবায়াকে সংবিধান সংশোধনের বুদ্ধি দেন বিশিষ্ট আইনজীবী রমেশ ডি সিলভা, পিসি ও মনোহর ডি সিলভা, পিসি।
এর পরই প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মাধ্যমে ডি সিলভাদের কাছে সংবিধান সংযোজনের লিখিত আবেদন জানান গোতাবায়া। রমেশ ডি সিলভার দ্বারা চালিত নয়জন সদস্যের এক দলকে দেওয়া হয়েছে এই দায়িত্ব। ইতোমধ্যে খসড়া চূড়ান্ত করে ফেলেছে দলটি।
গেছে, নতুন দুটি আইন সংযোজন করা হবে সংবিধানে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই করা হয়েছে এটি। প্রস্তাবিত এই সংযোজিত আইনের খসড়া প্রধান বিরোধী দল, সাসগি জন বলভেগয়ার (এসজেবি) প্রধান নেতাকেও পাঠানো হয়েছে।
সংশোধনীতে দুটি অনুচ্ছেদ থাকবে। প্রথম অনুচ্ছেদের মধ্যে আবার তিনটি ধারা। সেখানে বলা হয়েছে-বিশেষ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের বহিষ্কার করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট। অপসারণের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনও করতে পারবেন তিনি। বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে কোনো অবস্থাতেই বহিষ্কার করার ক্ষমতা ছিল না প্রেসিডেন্টের। কিন্তু প্রস্তাবিত এই সংযোজনটি কার্যকর করা হলে সম্ভব হবে সেটি। যেখানে প্রেসিডেন্টের ‘নির্বাহী ক্ষমতা পুরোপুরিভাবে বাতিল করা হোক’ বলে আন্দোলন হচ্ছে-ফুঁসে উঠেছে গোটা দ্বীপরাষ্ট্র, সেখানে প্রেসিডেন্ট শাসনই আরও পাকাপোক্ত করতে যাচ্ছেন শ্রীলংকার গোতাবায়া।
সংশোধনীর প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, মন্ত্রিসভা হবে ১৫ সদস্যের। কোনো রাজনৈতিক দল সেটা নয়, দক্ষতা অনুসারে দেওয়া হবে মন্ত্রণালয়। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে সদস্যপদ লাভ করতে। পরের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রথম অনুচ্ছেদের মাধ্যমে বানানো মন্ত্রিসভায় তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে এক বছরের জন্য। মেয়াদ শেষে পুনঃনিয়োগও দেওয়া যেতে পারে। বলা হচ্ছে যে, এই প্রস্তাবটি পাশ হলে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন মন্ত্রীরা।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রীলংকার অর্থনিতিকে সবল রাখার যে প্রচেষ্টা, সেটা বাজেভাবে বিফলে যেতে পারে, যদি-না সংসদে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে কাজ করে। তথ্যসূত্রে আরও জানা গেছে যে, মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও নতুন মন্ত্রিসভা এখনো দাঁড় করাতে পারেননি প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া।
প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে ছাড়া সবাই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেছেন গত সপ্তাহে। প্রস্তাবিত আইনটি নিবন্ধ ৪৪-এর পরে যুক্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে। প্রস্তাবটি পাশ হলে এটি নিবন্ধ ‘৪৪-এ’ হিসাবে সংবিধানে সংযোজন করা হবে।