শিরোনাম
রাতভর নাটকীয়তার পর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে (পার্লামেন্ট) অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। স্পিকারের পদত্যাগের পর তার ভাগ্য নির্ধারণী ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার রাত ২টার দিকে পাকিস্তান মুসলিম লিগের (এন) সদস্য আয়াজ সাদিকের পরিচালনায় অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে ৩৪২ জন আইনপ্রণেতার মধ্যে ১৭৪ জন ভোট দেন। যদিও বিরোধীদের ১৭২ জনের সমর্থন দরকার ছিল।
বিরোধী জোটের সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, জাতীয় সরকারের মতো নতুন ফেডারেল সরকার গঠন করা হবে। এতে আনুপাতিক হারে শরিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এর মেয়াদ ছয় মাস অথবা এক বছর রাখার বিষয়টি বর্তমানে বিবেচনায় রয়েছে। এই মেয়াদের মধ্যে নির্বাচনি সংস্কার ও জবাবদিহি–সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলো পাস হতে পারে। সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনকে যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে।
অনাস্থা ভোট যেন না হয়, সেজন্য অধিবেশন দীর্ঘায়িত করতে সরকারের পরিকল্পনার পালটা কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে শনিবার বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফের চেম্বারে পরামর্শক বৈঠক করেছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। অধিবেশনের বিরতির সময় বৈঠক করেন তারা।
ইমরান খানের প্রতি এই অনাস্থা ভোটের আয়োজনে কাদের ভূমিকা রয়েছে সেটি নিয়ে চলছে আলোচনা। মূলত ইমরানকে হটাতে পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো এক হয়েছিল। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে একটি শক্তিশালী জোটও গঠন করেছিল তারা।
২০১৯ সালে ইমরান খান সরকারের পতন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে দেশজুড়ে লংমার্চ করেছিলেন পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (জেইউআই-এফ) প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান।
সেসময় মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ প্রায় সব বিরোধী দলই মাওলানার আহ্বানে আজাদি মার্চে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। মূলত তখন থেকেই রাজপথে প্রকাশ্যে ইমরান খান বিরোধী তৎপরতা নজরে আসে।
এছাড়া পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন-র (পিএমএল-এন) বর্তমান প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ, মাওলানা ফজলুর রহমান ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির যৌথ প্রচেষ্টাতেই ইমরান সরকারের পতন হয়েছে।
শাহবাজ শরীফ
শাহবাজ শরীফ পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা। এর বাইরে তার আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের আপন ছোট ভাই। ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর নওয়াজ শরীফ লন্ডনে নির্বাসিত জীবন-যাপন করছেন।
শাহবাজ শরীফ পাকিস্তানের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার আগে পাঞ্জাব প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি পাঞ্জাবের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলেন।
শাহবাজ শরীফ সবমিলিয়ে তিনবার পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে প্রথমবার মূখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশারফ ক্ষমতা দখল করলে শাহবাজ শরীফ সৌদি আরবে পালিয়ে যান। আট বছর সৌদিতে নির্বাসিত থাকার পর ২০০৭ সালে তিনি পাকিস্তানে ফেরেন।
২০০৮ সালে তার দল জয় পেলে ফের তিনি পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রী হন। ২০১৩ সালে তৃতীয়বার তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
কিন্তু ২০১৮ নির্বাচনে মুসলিম লিগ-এন হেরে যায়। এরপরই শাহবাজ শরীফকে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা বানানো হয়।
৭০ বছর বয়সী শাহবাজ দেশের বাইরে শাহবাজ ততটা পরিচিত নন। লন্ডন ও দুবাইয়ে বিলাসবহুল বাড়ি থাকার কারণে খবরের শিরোনাম হলেও দেশের ভেতরে প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য শাহবাজের সুনাম রয়েছে।
মাওলানা ফজলুর রহমান
মাওলানা ফজলুর রহমান পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (জেইউআই-এফ) বর্তমান সভাপতি ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। ১৯৮৮ সাল থেকে বর্তমান পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য তিনি।
১৯৮১ সালে তিনি যখন জেনারেল জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কারাবন্দি হন তখন তাকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব নির্বাচন করা হয়। মাওলানা ফজলুর রহমান রাজনৈতিক মামলায় মোট ১০ বার কারাবরণ করেছেন।
১৯৯৩ সনে বেনজীর ভূট্টো দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে মাওলানা ফজলুর রহমান জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
২০১৯ সালে ইমরান খানের পদত্যাগ এবং পুনরায় নির্বাচন দাবিতে মাওলানা ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানজুড়ে আজাদি মার্চ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় কয়েক লাখ কর্মী-সমর্থক নিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে কয়েক দিন অবস্থান করেন তিনি।
আসিফ আলি জারদারি
আসিফ আলি জারদারি পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান। পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর স্বামী জারদারি ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পিপিপি দেশটির বর্তমান পার্লামেন্টের তৃতীয় বৃহত্তম দল।
বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বেনজির ভুট্টো ও আসিফ আলি জারদারির ছেলে। সন্ত্রাসী হামলায় তার মা বেনজির ভুট্টো নিহত হওয়ার পর মাত্র ১৯ বছর বয়সে পিপিপির চেয়ারম্যান হন তিনি। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করা ৩৩ বছর বয়সী বিলাওয়াল ভুট্টো একজন প্রগতিশীল নেতা হিসেবে পরিচিত।
বিলাওয়াল ভুট্টো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুবই জনপ্রিয়। যদিও উর্দু ভাষায় দুর্বল হওয়ায় তাঁকে প্রায়ই উপহাসের পাত্র হতে হয়।
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও যুগান্তর