"ধর্মীয় পোশাক পরা না পরায় বিশ্বের অনেক দেশেই হয়রানি"

ফানাম নিউজ
  ১০ এপ্রিল ২০২২, ১১:৫৯

২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৫৬টি দেশের নারীরা তাদের পোশাক খুব বেশি ধর্মীয় অথবা খুব বেশি ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় সামাজিকভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। 

মৌখিক কট্যূক্তি থেকে শুরু করে শারীরিক আঘাত, এমনকি হত্যাকাণ্ডও ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টার গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণের পর এমন তথ্য জানাচ্ছে।

ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতির উপর সরকার ও সমাজের বিধিনিষেধ নিয়ে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে পিউ রিসার্চ সেন্টার। গবেষণার জন্য প্রথমে কয়েকটি প্রশ্ন ঠিক করা হয়। তারপর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত ১৯টি রিপোর্টে থাকা প্রতিটি দেশের তথ্যের মধ্যে ঐ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়। এভাবে ‘সরকারি বিধিনিষেধ সূচক’ ও ‘সামাজিক হয়রানি সূচক’ প্রকাশ করা হয়।

পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, ৫৬টি দেশের মধ্যে ৪২টি দেশে নারীরা ধর্মনিরপেক্ষ পোশাক রীতি লঙ্ঘন করায়, অর্থাৎ হিজাব বা অন্যান্য ধর্মীয় পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর ১৯টি দেশের নারীরা ধর্মীয় পোশাক রীতি না মানায়, অর্থাৎ হিজাব না পরায় কিংবা ধর্মীয় রীতির সঙ্গে মেলে না এমন পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল ও রাশিয়ায় নারীদের এরকম দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে।

হয়রানির তথ্য পাওয়া ৫৬টি দেশের মধ্যে ইউরোপের দেশ হলো ২২টি। এর মধ্যে ২০টি দেশে নারীরা হিজাব বা অন্য ধর্মীয় পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর দুটি দেশে হিজাব না পরায় নারীদের হয়রানি হতে হয়েছে। ২০১৮ সালে ডেনমার্কে এক চালক হিজাব পরা এক মুসলিম নারীকে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন। জার্মানিতে এক নারী একজন মুসলিম নারীকে মেরে তার হেডস্কার্ফ খুলে ফেলার চেষ্টা করেন।

এশিয়া-প্যাসিফিকের ১৬ দেশে নারীরা হয়রানিতে পড়েন। ২০১৮ সালে হেডস্কার্ফ না পরায় এক নারীকে হামলা করায় মালয়েশিয়ায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের কিরগিস্তানে বিলবোর্ডে বিভিন্ন রকম ইসলামি পোশাক পরিহিত নারীর ছবি বিতর্ক তৈরি করেছিল।

সাব-সাহারা আফ্রিকান অঞ্চলের সাত দেশের নারীরা পোশাকের কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে কেনিয়ার কিছু অংশে নারী শিক্ষকদের হিজাব পরার নিয়ম করা হয়েছিল। আর লাইবেরিয়ায় হেডস্কার্ফ পরায় মুসলিম নারীরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে।

আমেরিকার ছয়টি দেশে নারীদের হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে। ২০১৮ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে এক হিন্দু স্কুলে এক মুসলিম নারীকে হিজাব না খুললে স্কুল থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিল। ২০১৬ সালে কানাডায় এক নারী এক হিজাব পরিহিতার দিকে থুতু ছুড়ে তার হিজাব ও চুল ধরে টান দিয়েছিলেন।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোতেও নারীরা হিজাব বা ধর্মীয় পোশাক পরার চেয়ে না পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। ২০১৬ সালে কাতারে এক মুসলিম নারী হিজাব না পরে খবর উপস্থাপনা করায় সমালোচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে ইসরায়েলের একদল অর্থডক্স ইহুদিকে তাদের দৃষ্টিতে ‘অভদ্র’ পোশাক পরায় এক তরুণীর দিকে চিৎকার ও তাকে ধাওয়া করতে দেখা গিয়েছিল।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে