শিরোনাম
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কাল। নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হবেন দ্বিতীয়বারের মতো ভোটযুদ্ধে থাকা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনি জরিপ বলছে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এবারের আসরে যে প্রতিযোগিতা হবে-গত কয়েক দশকে তা দেখা যায়নি। ১২ জন (৮ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী) প্রার্থীর মধ্যে ম্যাক্রোঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ধরা হচ্ছে কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল র্যালির প্রতিষ্ঠাতা জিন লা পেনের সুযোগ্য কন্যা ম্যারিন লা পেনকে। প্রধান ছয় প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে তিনজন ডানপন্থি এবং দুজন বামপন্থি ফরাসি রাজনীতিক।
ধারণা করা হচ্ছে-ফ্রান্সে জীবিকা নির্বাহের খরচ বেড়ে যাওয়া, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, অভিবাসন নীতি এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। সিএনএন, বিবিসি।
কীভাবে হচ্ছে নির্বাচন
ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক পোলিং অ্যান্ড মার্কেট রিসার্চ ফার্ম আইএফওপির গত ছয় মাস ধরে চালানো জরিপ বলছে কাল অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হচ্ছেন রিপাবলিক অন দ্য মুভ-এর মধ্যপন্থি রাজনীতিক ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রীতি অনুযায়ী কোনো প্রার্থী কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সেরা দুই প্রার্থীর মধ্যে ১৪ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
আইএফওপির জরিপ বলছে, ১২ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৫ জন ১০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন। এটাই যদি নির্বাচনের প্রতিফলন হয় তবে অবশ্যম্ভাবীভাবে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে ওই নির্বাচনের তারিখ হবে ২৪ এপ্রিল। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে যিনি
বিজয়ী হবেন, তিনিই ১৩ মে ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী কারা
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর প্রতি ডান-বাম উভয় শিবিরের ভোটারদের সমর্থন রয়েছে। নির্বাচনি জরিপে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু গত কয়েক দিনের জরিপে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে চোখ রাঙাচ্ছেন লা পেন। মারিন লা পেন ও এরিক জিম্যো দুজনেই অতি-ডানপন্থি। তাদের মধ্যে জিম্যোকে দেখা হয় সবচেয়ে বেশি কট্টরপন্থি হিসেবে। ভ্যালেরি পেক্রেস ডানপন্থি রিপাবলিকানদের প্রার্থী হয়েছেন। জ্যঁ-লুক মেলেশঁ নির্বাচন করছেন অতি-বামপন্থি রাজনৈতিক দল ফ্রান্স আনবাউড থেকে এবং ইয়ানিক জাদো গ্রিন পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
পর্যায়ক্রমে বেশ কিছু বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার পর ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী বাম রাজনৈতিক দলগুলো এখন আর আলোচনায় নেই। সোশালিস্ট পার্টির ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কিন্তু, এর পর থেকে দলটির প্রতি সমর্থন কমে গেছে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, বাম শিবিরের এ বিভাজনের কারণে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ লাভবান হতে পারেন। যদিও ডানপন্থিরা অভিযোগ করছেন যে, ম্যাক্রোঁ তাদের নীতি অনুসরণ করছেন।
নির্বাচনে প্রধান ইস্যুগুলো
নির্বাচনি প্রচারণার প্রথম দিকে ইউক্রেনের যুদ্ধই প্রাধান্য বিস্তার করেছে। এর ফলে নীতিগত কারণে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পায়। ফ্রান্সের ভোটারদের মধ্যে রুশবিরোধিতা যেকোনো প্রার্থীকে এগিয়ে দেবে অনেকদূর। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে-ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের জীবিকা নির্বাহের খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রধান ইস্যু হিসাবে গণ্য হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, অভিবাসন নীতি ইত্যাদি।
ফ্রান্সের অর্থনীতি বর্তমানে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতিতে সর্বস্তরের মানুষের ওপরে এর প্রভাব পড়েছে। ফ্রান্সে বেকারত্বের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৪ শতাংশে। ইউরোপ অঞ্চলের দেশগুলোর গড় হারের তুলনায় এ হার সামান্য বেশি। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ক্ষমতা গ্রহণের সময় যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, বর্তমান হার তার খুব কাছাকাছি।
এ ছাড়া অভিবাসনের বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ২০২০ সালে ফ্রান্সে বসবাসরত অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৬৮ লাখ। তাদের এক-তৃতীয়াংশ ইউরোপীয়, যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য বা সদস্য নয়-এমন দেশগুলোর নাগরিকরা থেকে ফ্রান্সে গেছেন।
সূত্র: সিএনএন, বিবিসি ও যুগান্তর