শিরোনাম
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে। এই ভোটই বলে দেবে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকবেন কি না।
ভোটাভুটির আগের দিন শুক্রবার রাতে পাকিস্তান সময় দশটায় (বাংলাদেশ সময় ১১টা) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান খান। ১১ মিনিটের ওই ভাষণে ইমরান খান তাকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এ ছাড়া বিরোধীদের সঙ্গে ভোটের ময়দানেই দেখা হবে বলে জানান তিনি। রবিবার বিকেলে দেশবাসীকে বিক্ষোভের জন্য রাস্তায় জড়ো হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
তবে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানিয়েছেন তিনি সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় মেনে নিয়েছেন।
ভাষণে বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি কয়েকজন আমেরিকান কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তারা (আমেরিকান কর্মকর্তারা) আমার রাশিয়ার সফরকে টার্গেট করেছে। এখানে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করার আগেই এসব হচ্ছিল। আমেরিকার কর্মকর্তারা বলেছিল, ইমরান খানের সরকার যদি টিকে যায়, তাহলে পাকিস্তানকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। কিন্তু যদি সে হেরে যায়, তাহলে পাকিস্তানকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। এর মানে, আগে থেকেই তারা সবকিছু সম্পর্কে জানত। তাদের স্ক্রিপ্টেই সব কিছু হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গে ইমরান আরও বলেন, আমাদের যেসব নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা, আফগানিস্তান, ইরাক যুদ্ধ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, তাদের সবার প্রোফাইল আছে আমেরিকানদের কাছে। তারা দেখেছে যে, শুধু একজন ইমরান খান তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত নন। পশ্চিমা শক্তি চায় পাকিস্তানের ক্ষমতায় তারাই থাকুক, যারা তাদের সুরে নাচবে। কিন্তু পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বে আক্রমণ আমি সহ্য করব না।
তিনি বলেন, যদি 'ভিক্ষুকরা নির্বাচন না করে' ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা আবার পরাশক্তির কাছে ছুটবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কখনো ভারতের স্বার্থবিরোধী বিবৃতি দেয় না। কিন্তু তারা পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা করে।
ভাষণের এক পর্যায়ে অনাস্থা প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যখন অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, তখন আমি পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতবি করাই। আমি আমার সরকারকে তাই বিলুপ্ত করেছিলাম এবং নতুন ম্যান্ডেট চেয়েছিলাম। বিরোধীরা ইভিএম চায় না, কারণ তারা জানে স্বচ্ছ নির্বাচন হলে তাদের জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। বিরোধীরা দুর্নীতিতে ডুবে আছে। তারা আমার কবর চায় যাতে তাদের ওপর থাকা সব মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। ইতিহাস কাউকে ছেড়ে কথা কয় না, সবকিছুর বিচার নির্দিষ্ট সময়েই হবে।
ডন নিউজের এক সমীক্ষা বলছে, পার্লামেন্টে ইমরানের সরকার ইতিমধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ইমরানের পক্ষে আছে ১৬৪ ভোট ও বিরোধীদের পক্ষে আছে ১৭৭ ভোট। ইমরানকে অনাস্থা প্রস্তাব থেকে উৎরে যেতে ১৭২ ভোটের দরকার।
গত ৭ মার্চ জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এরপর ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার। প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির জন্য ৩ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়। ওই দিনের কার্যসূচিতে প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিসহ ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এরপর ৩ এপ্রিল বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা দিয়ে খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। একই সঙ্গে অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন তিনি। তবে ক্ষুব্ধ বিরোধী দলগুলো নিজেরাই অধিবেশন চালিয়ে যান। তারা পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) আইনপ্রণেতা আইয়াজ সাদিককে স্পিকার নির্বাচিত করেন। অনাস্থা প্রস্তাব ১৯৭ ভোটে পাস করেন। অনাস্থা প্রস্তাব পাসে ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে ১৭২ ভোট প্রয়োজন। অনাস্থা ভোট খারিজের দিনই স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) শুনানি গ্রহণ করেন সুপ্রিম কোর্ট। টানা পাঁচ দিনের দীর্ঘ শুনানি শেষে অনাস্থা ভোট খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে বৃহস্পতিবার রায় দেন আদালত।
সূত্র: ডন নিউজ