শিরোনাম
শ্রীলঙ্কায় পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শপথ নিলেন নতুন চার মন্ত্রী। সোমবার (৪ এপ্রিল) প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের কাছে শপথবাক্য পাঠ করেছেন তারা। লঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর এ খবর দিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাসিল রাজাপাকসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আলি সাবরি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জিএল পেইরিস। এছাড়া দীনেশ গুনবর্ধনে শিক্ষামন্ত্রী ও জনস্টন ফার্নান্দো মহাসড়ক মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
এর আগে, চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে সৃষ্ট রাজনৈতিক টানাপোড়েনে রবিবার পদত্যাগ করেন দ্বীপরাষ্ট্রটির মন্ত্রিসভার সব সদস্য। লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ছাড়া মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্যই পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পদত্যাগকারী মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নিজের ছেলে নামাল রাজাপাকসেও। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সিদ্ধান্ত নিতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে সাহায্য করতে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা।
মন্ত্রীদের পাশাপাশি পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অজিথ নিভার্ড ক্যাবরাল। ক্যাবরাল শ্রীলঙ্কার একজন অন্যতম নীতিনির্ধারক। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মধ্যে তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন। বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে কাজ করছিলেন তিনি।
১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। ৭৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ায় বাইরের দেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার সরকার।
ফলে, ভয়াবহভাবে ব্যহত হচ্ছে দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গত বেশ কিছুদিন ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার অধিকাংশ এলাকা ১৩ ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে দেশটির বেশ কিছু হাসপাতাল সার্জারি বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি সড়বাতিগুলোও জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দ্রব্যমূল্যোরর উর্ধ্বগতি। শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে দেশটিতে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।
সংকট মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েক শ মানুষ। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী গুলিবর্ষণ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকার। চলছে ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ। শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় শুরু হওয়া কারফিউ চলবে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভের শঙ্কায় সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: ডেইলি মিরর ও দেশ রূপান্তর