শিরোনাম
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সম্প্রতি খাইবার পাখতুনখাওয়ায় এক জনসমাবেশে বিজেপি নেতাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি। রোববার ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে। এতে হেরে তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এমন মুহূর্তে ইমরান খান হঠাৎ চিরাচরিত অভ্যাস বদলে একটি ‘শত্রু’ দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করায় অবাক হয়েছেন অনেকেই।
সম্প্রতি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, মালাকান্দে এক উন্মুক্ত জনসমাবেশে ভারত ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গে একঝাঁক ইতিবাচক কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আমাদের প্রতিবেশী হিন্দুস্তানের বৈদেশিক নীতির প্রশংসা করতে চাই। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি মুক্ত ও স্বাধীন এবং এর একমাত্র লক্ষ্য, নিজের জনগণের উন্নতি করা।
খবরে বলা হয়েছে, এদিন হাজার হাজার সমর্থকের সামনে প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের প্রশংসা করতে দেখে অবাক হয়েছেন পাকিস্তানের অনেক নেতাই। কারণ এই ইমরান খানই একসময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নরেন্দ্র মোদীকে ‘হিটলার’ ও ‘নাৎসি নেতা’ বলে উপহাস করতেন। সেই তিনিই এমন সময়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করছেন, যখন তার সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে।
ইমরান খানের এমন ‘অভূতপূর্ব’ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, পররাষ্ট্রনীতির জন্য ভারত বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে। আমাদের রেকর্ডই সেই কথা বলে। তাই এটা বলা ভুল হবে যে, মাত্র একজন নেতাই ভারতের পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করেছেন।
দ্য নিউজের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান বজায় রেখেছে ভারত। তারা সরাসরি রাশিয়ার বিরোধিতা করেনি, রুশ আক্রমণের পক্ষেও কিছু বলেনি। এমনকি, রাশিয়া ইস্যুতে পশ্চিমাদের অবস্থান নিয়েও বিতর্কিত কোনো মন্তব্য করেনি ভারত। এর বদলে সব পক্ষকে সহিংসতা বন্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
এছাড়া, ভারত মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটের শরিক হলেও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে তেল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী মোদী যেভাবে ‘নিরপেক্ষ’ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছেন এবং ভারতের নিজস্ব স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। এই সংকটে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে পড়েননি মোদী। এমনকি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনে ভারতকে কোনো চাপের মধ্যে পড়তে হয়নি।
একই সময় পাকিস্তানের ঐতিহাসিক মিত্র সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ভারত। সৌদি আরব পাকিস্তানকে আর ঋণ দিচ্ছে না এবং আমিরাত সরকার পাকিস্তানের অনুরোধ সত্ত্বেও কাশ্মীর ইস্যুতে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের এমন সাফল্যের কারণে পাকিস্তানের বিরোধী নেতারা ইমরান খানকে আর মোদীর উদারহরণ না দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। এসব নেতার অভিযোগ, ইমরান খানের ‘অযোগ্যতার’ কারণেই গোটা বিশ্ব এখন পাকিস্তানকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।