শিরোনাম
ইউক্রেনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আক্রমণ এবং রাশিয়ায় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ব্যাপকভাবে আটক করার অনেক আগেই ক্রেমলিন আমলাতন্ত্রকে শ্বাসরোধ করে ঘরের শত্রুকে দমিয়ে রেখেছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সাল জুড়েই ক্রেমলিন গ্রেফতার, ইন্টারনেট সেন্সরশিপ এবং কালো তালিকাভুক্ত করে কারাবন্দি বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির সমর্থকসহ বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন শুরু করে।
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর এই দমনপীড়নে আরও গতি আসে। রয়টার্সের বিশ্লেষকরা এই দমনপীড়নের স্বীকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানিয়েছে কীভাবে এই দমনপীড়ন তাদের ওপর প্রভাব ফেলছে।
এই দমনপীড়নের ক্ষেত্রে ক্রেমলিনের ‘অস্ত্রাগারের’ বহুল ব্যবহৃত অস্ত্র হলো ‘ফরেন এজেন্ট’। মূলত পুতিনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তিনি এই ‘ফরেন এজেন্ট’ তালিকায় চলে যান। এই তালিকায় একবার নাম উঠলে তার উপর নজরদারি করতে থাকে কর্তৃপক্ষ।
রয়টার্স জানায়, ‘ফরেন এজেন্ট’ তালিকায় রয়েছেন একটি অলাভজনক গণমাধ্যম প্রতিরক্ষা কেন্দ্রের প্রধান আইনজীবী গ্যালিনা আরাপোভা। পশ্চিম রাশিয়ার ভোরোনজে অবস্থিত গ্যালিনার প্রতিষ্ঠান মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে।
২০২১ সালের ৮ অক্টোবর রাশিয়ার আইন মন্ত্রণালয় গ্যালিনাকে (৪৯) ‘ফরেন এজেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। কী কারণে তার এই তালিকায় নাম উঠল, তা জানেন না গ্যালিনা। আইন মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি।
তবে কারণ যাই হোক, এই তালিকায় নাম ওঠার কারণে বদলে যায় গ্যালিনার রোজকার জীবন। এই কারণে তার দৈনন্দিন জীবনে যুক্ত হয় লাল ফিতা ও সরকারি তদন্তের পাহাড়। তাকে প্রতি তিনমাস পর পর আইন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়। এমনকি সুপার মার্কেটে গিয়ে কি কিনেছেন তাও বাদ যায় না সেই তালিকায়। সেই রকমই ৪৪ পৃষ্টার একটি প্রতিবেদন হাতে রয়টার্সের হাতে এসেছে বলে সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে।
শুধু তাই নয়, প্রতি ছয় মাস পর পর ‘ফরেন এজেন্টদের’ কীভাবে সময় কাটিয়েছেন তার একটি হিসাব মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হয়। কিছু অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাদের গৃহস্থালী কাজের তালিকা করেন।
গ্যালিনা অন্যান্য ‘ফরেন এজেন্টদের’ আইনী পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি প্রায়ই প্রয়োজনীয় নিময় সম্পর্কে অন্ধকারেই থাকেন।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারছি না যে তারা আমাদের ঠিক কী করতে চায় কারণ আইনটি খুবই অস্পষ্ট। তারা কিছু ব্যাখ্যা করে না। আমাদের কি সুপারমার্কেট থেকে সব প্রাত্যহিক খরচ এবং রসিদ বা তিন মাসের জন্য সামগ্রিক ব্যয় তালিকাভুক্ত করতে হবে?
গ্যালিনা জানান, রিপোর্টগুলো তিনি প্রথমে প্রিন্ট করেন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। রিপোর্টেও পৃষ্ঠাগুলোও সাবধানে একত্রিত করা হয়। যদি একটি পৃষ্ঠাও অনুপস্থিত থাকে বা প্রতিবেদনটি দেরিতে দেওয়া হয় তবে তাকে জরিমানা করা হতে পারে। বারবার এই নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য মামলা হতে পারে এবং দুই বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
রয়টার্স ‘ফরেন এজেন্টদের’ ওপর আরোপ করা নিয়ম সম্পর্কে জানতে ক্রেমলিন, বিচার মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য রাশিয়ান সংস্থার কাছে বিস্তারিত প্রশ্ন পাঠিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কেউ কোনো মন্তব্য করেনি বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।